শনিবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাকে সামনে রেখে রায় পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে।
২০১৮ সালকে নির্বাচনের বছর হিসেবেই দেখছে সব রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের ১০ মাস আগে চেয়ারপার্সনের মামলার রায় সামনে রেখে শনিবারের বৈঠকটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে খালেদা জিয়ার কারাদন্ড হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার আযোগ্য হবেন তিনি।
খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে দল সাংগঠনিকভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়বে বলে মনে করছে নেতারা। আবার অনেক সিনিয়র নেতারাই তারেক জিয়াকেও খালেদা জিয়ার জায়গায় ভাবতে পারছেন না বলে মত দিয়েছেন বৈঠকে। আবার নির্বাচনে না গেলে দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে সেই শঙ্কায় চিন্তিত বিএনপির হাই কমান্ড।
তবে খালেদা জিয়াকে জেলে ঢুকানো হলে লাগাতার সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর প্রস্তাব দেন অনেক নেতা। তারেকপন্থী বলে পরিচিত স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, ম্যাডামকে যদি কারাগারে নেয় তবে দেশ অচল করে দেয়া হবে। এই সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমেই উৎখাত করা হবে।’
ওই নেতার এমন জ্বালাময়ী বক্তব্য শুনে বেগম জিয়া টিটকারী দিয়ে বলেন, বিগতদিনের আন্দোলনে দেখিছি তো কে কতক্ষণ মাঠে ছিলেন। মহিলা দলের নেত্রীরা ছাড়া তো আপনাদের মাঠে পাওয়া যায় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কিন্তু সিনিয়র অনেক নেতারাই আবার আন্দোলন কতোটা সফল হবে তা নিয়েও তাদের সংশয় ব্যক্ত করেছেন বলে জানায় বিএনপির একটি সূত্র। আন্দোলনে বিএনপি খুবই নড়বড়ে অবস্থানে আছে বলে মনে করছে বিএনপির সেই নেতাদের ধারণা। অতীতে ঢাকা সহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে বিএনপির পদধরী নেতাদের কোন আন্দোলনে সরাসরি পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন তারা। তাই সহিংস বা কঠোর আন্দোলনে যাবার কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাইলেও দলের বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে আপাতত সংশয়ে রয়েছে বিএনপির হাই কমান্ড। বিগত দিনের সহিংস আন্দোলনেও কোন ফল না আসায় তেমন আন্দোলন নিয়ে তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। বিএনপিতে উদারপন্থী বলে পরিচিত এক নেতা বলেন, অতীতে সহিংস আন্দোলন বা মানুষ পোড়ানোর মত ঘটনা জনমনে বিএনপি সম্পর্কে বেশ নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে। তাই এমন ধরনের কর্মসূচি নিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, এবার যদি আমরা মাঠে কার্যকর কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারি তবে ম্যাডামকে বাকি জীবন জেলেই কাটাতে হবে। আর আমাদের সামনেও আর কোন সুযোগ থাকবে না।
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার ও রফিকুল ইসলাম মিয়া।