‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেননি। কোকোর সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই তারেক এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছেন। তারেক জিয়ার নির্দেশেই মালয়েশিয়ায় বসবাসরত কয়েকজন বাঙালি তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।’ এরকম একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করে মালয়েশিয়ার একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন জনৈক আবদুল হামিদ ওমর। তিনি মালয়েশিয়ার নাগরিক। তিনি কোকোর ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে পরিচিত।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নথিভুক্ত হয়েছে। মামলার দরখাস্তে কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান, মালয়েশিয়ায় কোকোর দুজন বন্ধু আব্দুল্লাহ নাভিদ এবং শিফাত হোসাইনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলার আরজিতে দাবি করা হয়েছে, কোকোর সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই তারেক এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছেন।
বেগম জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি কুয়ালালামপুরে মারা যান। বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে তাঁকে ইউনিভার্সিটি মালায়া মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তাঁর মৃতদেহ ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
প্রায় দুই বছর ১০ মাস পর অভিযোগ উঠেছে এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, হত্যাকাণ্ড। মামলার বাদী আব্দুল হামিদ ওমর একজন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী। তিনি আরজিতে অভিযোগ করেন যে, আরাফাত রহমান কোকো ২৭৫ কোটি রিঙ্গিত সম্পদের মালিক। অধিকাংশ সম্পদেরই নমিনি ছিল তাঁর বড় ভাই তারেক জিয়া। কোকোর মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে আমার অফিসে বসেই কোকোর সঙ্গে তাঁর বড় ভাইয়ের সাথে টেলিফোনে কথা কাটাকাটি হয়। কোকোকে তারেক বেশ কিছু টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন ঠিকানায় পাঠাতে বলে। কিন্ত এত টাকা এই মুহূর্তে পাঠানো সম্ভব নয় বলে টেলিফোনে জানান তিনি। অভিযোগে বলা হয়েছে, এই ঝগড়ার পর কোকো তাঁর যাবতীয় সম্পত্তির নমিনি তাঁর স্ত্রী শর্মিলা রহমানের নামে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ব্যপারে একজন ভালো আইনজীবী দেখার জন্যও কোকো আমাকে অনুরোধ করে।
ওমরের অভিযোগ, এই ঝগড়ার দুদিন পর আরাফাত রহমান কোকোর বাসায় ৫ জন বাঙালি যায়। কোকোর স্ত্রী শর্মিলা আহমেদের সামনেই তাঁরা বাংলাদেশে আন্দোলনের জন্য টাকা প্রয়োজন বলে জানায়। তাঁরা বলে ‘ভাইয়া’ তাঁদের পাঠিয়েছে। তাঁরা এও হুমকি দেয় যে টাকা না দিলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। ওমর তাঁর আরজিতে বলেছেন, এই বাঙালিরা স্থানীয় বিএনপির নেতা বলে কোকোর স্ত্রী শর্মিলা আমাকে জানায়। আমি পুলিশে খবর দিতে চাইলেও শর্মিলা আমাকে বারণ করে।
ওমর অভিযোগে বলেছেন, ‘কোকোর মৃত্যুর খবর শুনেই আমি হাসপাতালে যাই। সেখানে আমি বেশকিছু বাঙালি দেখি। কান্নারত শর্মিলা আমাকে বলে ওরাই কোকোর মৃত্যুর জন্য দায়ী। কিন্ত শাশুড়ি এবং পরিবারের নির্দেশে শর্মিলা তাঁর স্বামীর মৃত্যুর জন্য কারও বিষয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করেননি।’
অভিযোগে ওমর আরও বলেছেন, ‘কোকোর মৃত্যুর ৩০ দিনের মধ্যে তারেক অ্যাটর্নির মাধ্যমে কোকোর সব টাকা পয়সা সরিয়ে নিয়েছে। কোকোর স্ত্রীও এখন লণ্ডন প্রবাসী বিধায় আমি এই মামলা করলাম।’
উল্লেখ্য, কোকোর মৃত্যুর পর মালয়েশিয়া বা বাংলাদেশে কোথাও একমাত্র ছোট ভাইয়ের মরদেহ দেখতে যাননি তারেক জিয়া। যদিও, অন্তত দুবার তিনি লন্ডন থেকে সৌদি আরব গিয়েছিলেন।