পাকিস্তানী সেনানিবাসে কাটানো দিনগুলোই জীবনের সেরা সময়-খালেদা

0
34
খালেদা

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া জীবনানন্দ দাশের কবিতার সেই ক্লান্ত পথিক যেন এক। জীবনের শেষ সময়ে তাই এখন তিনি অতীত স্মৃতি রোমান্থন করেন তার কাছের মানুষদের কাছে।

ঢের বয়েস হয়েছে তার। প্রায় ৭০ বছর বয়স্ক বিএনপি নেত্রী জীবনের নানা চড়াই উৎড়ায় পার করে এখন জীবন সায়াহ্নে এসে পৌঁছেছেন। এর মাঝে তার স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি। দুই সন্তানের একজন আরাফাত রহমান কোকো গত বছর হটাৎ করে অতিরিক্ত মাদক গ্রহণের কারণে অকালে পরলোক গমন করেন। তার পরে নিজের শেষ জীবনে এসে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কাছে নিজের রাজনৈতিক কলাকৌশল বার বার হোচট খাচ্ছে। বলা যায় নিজের রানৈতিক ভুলের কারণে তিনি ও তার দল দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে ছিটকে গেছেন। সহসাই ক্ষমতায় ফিরবেন এমন আশা তিনিও আর করেন না।খালেদা

এমন পরিস্থিতিতে খালেদা তার কাছের মানুষদের কাছে এখন অতীতমুখী জীবনের গল্পই বেশি করে থাকেন। সাবেক ছাত্রদল নেত্রী ও বর্তমানে মহিলা দলের একনেত্রী যে কিনা খালেদা জিয়ার কাছের বলে পরিচিত তার সঙ্গে এক আলাপচারিতায় খালেদা তার জীবনের শুরুর স্বপ্ন ও আশাআকাঙ্খার কথা বলে শুনিয়েছেন। তিনিই এক ঘোরোয়া আড্ডায় খালেদা জিয়ার সেই গল্প করেছেন। তার নাম না করে সেই সময়ের বেগম খালেদা জিয়ার শুরুর জীবনের কথা আমাদের পাঠকদের জন্য আমরা আজ তুলে এনেছি।

মেজর জিয়া পাকিস্তান আর্মির এবং সেদেশের সেনা গয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর একজন বিশ্বস্ত এবং চৌকশ সেনা অফিসার হিসেবে আজীবন সেবা করার যে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন তা তিনি সব সময়ই মেনে চলার চেষ্টা করতেন। পাকিস্তান আর্মি ১৯৬০ সালে তরুণ সেনা অফিসার জিয়াকে বর্তমান বাংলাদেশের দিনাজপুরে পোস্টিং দেয় বিশেষ একটা মিশন দিয়ে। বাঙালীরা যাতে তাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য কোন প্রকার আন্দোলন দানা বেঁধে তুলতে না পারে সেই মিশন নিয়ে তরুণ ক্যাপ্টেন জিয়া দিনাজপুরে আসলেন। সেখানেই কিশোরী পতুলকে ( বেগম জিয়ার ডাক নাম) দেখে জিয়া তাকে পছন্দ করে সেই বছরেরই আগস্ট মাসে তাকে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পরেই জিয়া তাকে নিয়ে পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচী চলে যায়। সেখানকার সেনানিবাসে তাদের সংসার শুরু হয়। শুরুর সেই দিনগুলো বেগত জিয়া এখানো খুব মিস করেন বলে তার কাছের লোকদের কাছে বলেন। কিন্তু রাজনীতির কঠিন মারপ্যাচে সেই ভালোলাগার কথা বলা যায় না সবার সামনে এই নিয়েও বেগম জিয়ার মনোকষ্ট আছে।

বেগম জিয়া এক ঘরোয়া আড্ডায় বলেন, ‘নতুন বিয়ে হয়েছে। সংসার শুরু করলাম করাচীর সেনানিবাসে। সেখানকার ঝকঝকে তকতকে সুন্দর সাজানো গোছানো পরিবেশ মনকে নিমিষেই ভালো করে দিত। মনে হতো যেন জীবনে আর কিছুই চাওয়ার নেই।’ কিছুদিনের মধ্যেই অন্যান্য সেনা অফিসারের বউদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সখ্য গড়ে উঠে। কিশোরী খালেদা জিয়া সে সময় সেনানিবাসের ক্লাবে দিনরাত আড্ডাবাজি পার্টি এবং জীবনের উদ্যামতায় মেতে থাকতেন। তিনি নাকি তার স্বামী তখনকার তরুণ ক্যাপ্টেন জিয়াকে বলেছিলেন অবসরের পরে এই করাচীতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান। বেগম জিয়ার সেই চাওয়া পূরণ হয়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কারণে। তবে বেগম খালেদা জিয়া একাধিক ঘরোয়া বৈঠকে এটা স্বাকীর করেছেন যে কিশোরী বয়সের সেই ভালোবাসার করাচী শহর বা পাকিস্তান সেনানিবাসের জীবনই এখনো তার কাছে স্বপ্নের দিনগুলোর মত মনে হয়। সেই দিনগুলোই তার জীবনের অন্যতম সেরা।

comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here