কাউন্সিলের পর ৩ মাস অতিবাহিত হতে চললেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না করায় বিএনপিতে ক্ষোভ বাড়ছে। এখন পর্যন্ত তিন দফায় ৪৮ জনের নাম ঘোষণা করলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে কোন নাম ঘোষণা না করায় দলের মধ্যম সারির নেতাদের মধ্যে তীব্র হতাশা বিরাজ করছে।
দলে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে গত কমিটির এক সাংগাঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, ’ কেন কমিটি হচ্ছে না তা বুঝতে তো অতি জ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই। সাধারণ জ্ঞান থাকলেই এটা বোঝা যায় ‘ লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে ওই নেতা বলেন, হয়তো এখনো তার কাছে উপযুক্ত নাজরানা পৌঁছেনি সবার তরফ থেকে তাই সেখান থেকেও কোন গ্রিন সিগনাল আসছে না।
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন ভাই আমরা এমন এক দলের রাজনীতি করি মাঝে মাঝে মনে হয় (জিয়া পরিবারের দিকে ইঙ্গিত করে) তারা রাজা-রানী আর আমরা সাধারণ প্রজা। আমাদের কথার কোনই দাম নেই দলের ফোরামে। দল চলছে স্বেচ্ছাচারি ভাবে।
কেন এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে না এমন প্রশ্ন করলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শাসক দল আওয়ামী লীগের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের কারণে এখনো আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারিনি। দলের অনেক নেতা এখনো জেলে এবং ম্যাডামের মামলাগুলো দ্রুত সচল হওয়ার কারণে ম্যাডাম কমিটির বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারছে না।
কাউন্সিলের তিনমাস পরেও বিএনপির মত বড় দলের কমিটি দিতে না পারা কি রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা কিনা জানতে চাইলে রিজভী রাগান্বিত স্বরে বলেন, বিএনপি কিভাবে চলবে তা কি সাংবাদিকরা ঠিক করে দিবে?’ বিএনপির একটি গঠনতন্ত্র আছে এবং দল সেইভাবেই পরিচালিত হবে। গঠনতন্ত্রে কতদিনের মধ্য কমিটি করার কথা বলা আছে তাকে পাল্টা এই প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিএনপির ঘোষিত কমিটির অনেকেই দ্রুত কমিটি হোক এটা তারাও চান না। যতদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত না হচ্ছে ততদিন সব নেতারা এই নেতাদের কাছেই ধর্না দিবে এই কারণে তারাও এখনই পূর্ণাঙ্গ কমিটি চাচ্ছেন না।
ঘোষিত কমিটির মধ্যে আবার ক্ষমতার দ্বন্দ্বও চরম আকারে পরিলক্ষিত হয়। মহাসচিক মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভীর দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। ফখরুলকে মহাসচিব ঘোষণার দিনই তাকে পল্টন থানায় নাশকতার একটি মামলায় মহানগর মূখ্য হাকিম আদালত জেল-হাজতে প্রেরণ করলে দেশের প্রতিটি মিডিয়া হাউজে এর প্রতিবাদ পাঠায় রিজভী সাক্ষরিত একটি পত্রের মাধ্যমে। সেখানে ফখরুলকে জেলহাজতে পাঠানোর ঘোষণার ১০ মিনিটের মধ্যেই সেই চিঠি প্রতিটি মিডিয়ার প্রেরণ করা হয় এবং সেখানে লেখা হয় ভারপ্রাপ্ত মহাসিচব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী তার পছন্দের সাংবাদিকদের ফোন করেও বলেন তারা যেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব লেখে তার নামের শেষে।
বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমনিতেই এখন কোন পদ-পদবি নেই কমিটিতে। জানি না লন্ডনের আর্শিবাদ না পেলে নেতা হতে পারবো কিনা। তার উপর এই নেতাদের এই সার্কাস দেখলে হাসি পাই।