বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি যেন কিছুতেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। যতই রাজনীতির মূল স্রোতে ফিরতে চাচ্ছে ততই পা পিছলে যাচ্ছে যেন দলটির। এ নিয়ে দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মুষড়ে পড়েছে। তাদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ছে। দলের এই দূরাবস্থার জন্য তারা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেই দায়ী বলে মনে করে।
হতাশ বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দিকে চেয়ে থাকলেও বার বার আশাহতের বেদনা নিয়েই তাদেরকে ঘরে ফিরতে হয়েছে। সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে যেয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে খালেদা জিয়া যে আর জন সমর্থন পাবেন না এই সাধারণ কথা মাঠের নেতা-কর্মীরা বুঝলেও দলের প্রধান খালেদা বোঝেন না বা তার লন্ডন প্রবাসী পুত্র সেটা করতে দেন না বলে অভিযোগ খোদ দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের।
দীর্ঘ ছয় বছর পর দলের কাউন্সিল হয় চলতি বছরের মার্চ মাসে। কাউন্সিলের পর ৩ মাস অতিবাহিত হতে চললেও বিএনপি এখনো দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। এ নিয়েও দলের মধ্যে নানা কানাঘুষা চলছে। দলটির মধ্যম সারির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানায়, এমনিতেই দলের কাউন্সিল নিয়মিত হয় না তার উপর লোক দেখানো কাউন্সিল হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারাকে দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতার দিকেই আঙ্গুল তোলে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি ঘনিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক এমাজউদ্দিন বলেন, গণতন্ত্রের প্রধান শর্ত কাউন্সিল নিয়মিত করা। যেহেতু সরকারের নানা চাপের কারণে বিএনপি সঠিক সময়ে কাউন্সিল করতে পারেনি তাই একটু সময় দিলে বেগম জিয়ার নেতৃত্বেই ভালো কিছু আসবে এই দেশে।’
বিএনপির কমিটি গঠনে টাকাওয়ালাদের দাপটের কাছে অসহায় দীর্ঘদিন মাঠে সক্রিয় থাকা নেতারাই। এমন অভিযোগ দলটির ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নেতাদের। তাদের অভিযোগ টাকার কাছে তাদের মাঠের সকল শ্রম নিস্ফল হয়ে যায়। যার যত বেশি কালো টাকা আছে সে ততবড় নেতা হতে পারে বিএনপিতে।
ঢাকা মহানগরের এক নেতার সঙ্গে নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি জানান, ’সরকার বিরোধী এত আন্দোলন করলাম কিন্তু তাতে লাভ কি হলো। জাময়াত-শিবির সেই আন্দোলনে সহিংসতা করে আমাদের ন্যায্য আন্দোলনকে খেয়ে দিল।’ ওই নেতা অভিযোগ করেন ছাগল যেমন কোন গাছে মুখ দিলে সেই গাছ আর বাড়ে না তেমনি আমরা যতবার ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে গেছি ততবারই কেন্দ্র থেকে নির্দেশ জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। সেই আন্দোলনও সফলতার মুখ দেখেনি। সেই নেতা সরাসরি নাম না বললেও লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির কো-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন তার জন্যই বার বার বিএনপি হোচট খেয়েছে। তার আশেপাশের চমচাগুলোই সরকারকে বিএনপিকে চাপে রাখার সুযোগ করে দিচ্ছে।
বিএনপির প্রাণভোমরা বলা হয় ছাত্রদলকে। সেই ছাত্রদলকেও যেন বনসাই বানিয়ে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এই সংগঠনে নিয়মিত কোন ছাত্র নেই কেউ এখন আর। অধিকাংশই বিবাহিত, অছাত্র এবং ব্যবসায়ী । কথা বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের এক ছাত্রদল নেতার সঙ্গে। তিনি ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবষর্ষে ভর্তি হলেও এখনো দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করতে পারেননি। তার মধ্য তীব্র হতাশা জন্ম নিয়েছে। তিনি জানান এভাবে রাজনীতি হয় না। খালেদা-তারেক রহমানের স্বেচ্ছাচারিতায় আমাদের জীবন বিপন্ন হলেও মুখ খুলে বেশি কিছু বলতে পারি না।