বায়োমেট্রিক সীম রেজিষ্ট্রেশন এবং নিরাপত্তা বিষয়ক কিছু প্রশ্ন ও প্রাসঙ্গিক উত্তর

0
22

সন্ত্রাস দমন ও তাদের চিহ্নত করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় (পাকিস্তান, সৌদিআরব, বাহরাইন, নাইজেরিয়া প্রভূতি) বাংলাদেশেও গত সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে সঠিক নিয়মে সীম রেজিষ্ট্রেশন ও ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশন চালু করছে।

প্রশ্ন-১। লন্ডন ও ইউরোপে বায়োমেট্রিক সিষ্টেমে সীম রেজিষ্ট্রেশন নেই, বাংলাদেশে কেন?

উত্তর ক। ওসব ইউরোপীয় দেশে জন্ম থেকেই সব তথ্য বাসার ঠিকানা, নাম, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ সকল বৃত্তান্ত ডাটাবেজে লিপিবদ্ধ থাকে। এমনকি গাড়ীর পার্কিং এর টাকা জমা না দিলেও জরিমানা বাসায় এসে হাজির হবে। শপিং মলে নাম/বাসার ঠিকানা দিলেই আপনার বৃত্তান্ত চলে আসবে। সব তথ্য সব জায়গায় ডাটাবেজে থাকে।

খ। সব ব্যাংক, সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে জনবল ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েই অফিস আদালতে যেতে হয়।

গ। অনলাইন শপিং এ দৈনিক ৮০ লক্ষ গ্রাহক বায়োমেট্রিক সিষ্টেমের মাধ্যমে বিশ্ব জুড়ে লেনদেন করছে। দৈনিক প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা লেনদেন হয় এ বায়োমেট্রিক এর মাধ্যমে।

প্রশ্ন-২। বাংলাদেশে এর প্রয়োজন কেন?

উত্তর- সঠিক সীম রেজিষ্ট্রেশন না থাকার কারণে আইনশৃংখলা বাহিনী দীর্ঘদিন যাবৎ সন্ত্রাসী/ জঙ্গীদের চিহ্নিত/ধরতে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছিল। এমনকি সন্ত্রাসী একটি জাতীয় পরিচয় পত্রের দ্বারা ৬০ হাজার ভুয়া সীম গ্রহন করে অবৈধ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, জঙ্গী তৎপরতা, হুমকি, এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনা করে দেশের প্রতিদিন ৮/১০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি করছে। অসহায় মানুষের বিচার নিশ্চিত আর অসহায় কান্নার প্রতিকারের জন্য বর্তমান সরকার এ বায়োমেট্রিক সীম চালু করেছে।

প্রশ্ন-৩। এ পর্যন্ত কতজন বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করেছেন?

উত্তর- ইতমধ্যে গত ৪ মাসে প্রায় ৬ কোটি গ্রাহক নিজ /দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করছে। যা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ডেড লাইন

প্রশ্ন-৪। এটা ব্যক্তি ও দেশের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন হলেও বিএনপি জামাতের ব্যক্তিরা কেন বুঝতে পারছে না?

উত্তর- নিজ সন্তান, স্ত্রী পরিবার/দেশের নিরাপত্তার কথা না ভেবে অপহরণকারী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী,জঙ্গী, অবৈধ ভিওআইপিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য।

প্রশ্ন-৫। তথ্য বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাচার হতে পারে বলে বায়োমেট্রিক বিরোধীদের বক্তব্য কি ঠিক?

উত্তর- মোবাইল অপারেটরগন শুধু জাতীয় পরিচয় পত্র দ্বারা ভেরিফিকেশন করছে। বায়োমেট্রিক মেশিনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংরক্ষন করা হচ্ছে না ও এর কোন সুযোগও নেই। শুধু এনআইডি সার্ভারের সাথে যাচাই করা হচ্ছে।

প্রশ্ন-৬। যাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছে না, তাদের কি হবে?

উত্তর- ফিঙ্গারপ্রিন্ট, জাতীয় পরিচয় পত্রের সাথে না মিললে প্রতি জেলা শহরে, উপজেলায়/নিজ এলাকার এনআইডি অফিসে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ঠিক করে নিতে হবে। এনআইডি অফিস থেকে সাথে সাথেই একটি নম্বর প্রদান করবেন যা দিয়ে আপনি তৎক্ষনাৎ সীম রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন।

প্রশ্ন-৭। নতুন এনআইডি এর ক্ষেত্রে কি করতে হবে এতো সময় সাপেক্ষ বলে জানি।

উত্তর- এনআইডিতে গেলেই একটি এনআইডি নম্বর দেওয়া হবে তা দিয়েই সীম রেজিষ্টার সহ সকল এনআইডি এর কাজ সম্পন্ন করা যাবে। ডিসেম্বর ২০১৬ এর মধ্যেই SMART CARD প্রচলন হবে বিধায় অর্থের অপচয় করে এনআইডি কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে না। নম্বর ব্যবহার করেই সকল কাজ করা সম্ভবপর হচ্ছে।

প্রশ্ন-৮। এ পর্যন্ত কত সীম রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে?

উত্তর- ১৩ কোটি সীমের মধ্যে বর্তমানে ৯ কোটি সীম ব্যবহার হচ্ছে। ৬ কোটি মানুষ ইতিমধ্যেই ৪ মাসে বায়োমেট্রিক করা হয়েছে যা প্রায় ৬০%। যা সত্যিই আশাব্যঞ্জক।

প্রশ্ন-৯। একজন ব্যক্তি কতটি পর্যন্ত সীম নিবন্ধন করতে পারবে এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নীতিমালা কি?

উত্তর ক। সরকার কর্তৃক এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২০টি সীম নিবন্ধন করার নীতিমালা জারী হয়েছে যাতে ১৫ বৎসরের নীচে/অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানাদির সীম পেতে কোন অসুবিধা না হয়।

খ। সীম রেজিষ্ট্রেশনের মূল উদ্দেশ্য যে কোন সীমের মূল মালিকানা বের করা, যাতে মোবাইল দ্বারা কোন সন্ত্রাসী অবৈধ কার্যক্রম না করতে পারে, চাঁদাবাজ বন্ধ করা ও রাষ্ট্রীয় / ব্যক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে বায়েমেট্রিক সীম নির্দিষ্ট নিযুক্তি/নাম/দায়িত্বের অনুকুল প্রদান করে সীম মালিকানা নিশ্চিত করা হয়, এ নিয়ম সারা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।

প্রশ্ন-১০। এ বিষয়ে হাইকোর্টে রুল হয়েছে, এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য?

উত্তর- বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী, বোমাবাজ, সন্ত্রাসী যারা দেশের মানুষের আর নিজের নিরাপত্তা চায় না তারা এ রুল জারী করিয়েছে। তবে মাননীয় আদালত দেশের স্বার্থে বুঝতে পেয়ে শুধু শোকজ/রুল জারী করেছে। যথা নিয়মে বায়োমেট্রিক সীম রেজিষ্ট্রেশন হচ্ছে। কোন অসুবিধা নেই।

প্রশ্ন-১১। ফিঙ্গার প্রিন্ট Public Interest বিরোধী নয় কেন?

উত্তর- বাংলাদেশ সংবিধানের ১৯৭২ (আটিকেল ১০২ (২) এর আলোকে আপিলেট ডিভিশন Public Interest এর ১৪টি ক্ষেত্র নির্ধারিত করা হয়েছে। (১ আগষ্ট ২০১২) যা নিম্নোক্তভাবে ব্যাখ্যা করা যায়
ক। 18 BLC (AD)(2013)Public Interest Litigation (Para 4):
The expression ‘person aggrieved’ used in Article 102(1) means not any person who is personally aggrieved but one whose heart bleeds for the less fortunate fellow beings for a wrong done by any person or authority in connection with the affairs of the Republic or a Statutory Public Authority.

খ। 18 BLC (AD)(2013)Public Interest Litigation (Para 11):
No petitions will be entertained challenging the policy matters of the Government, development work being implemented by the Government, Orders of promotion or transfer of public servants, imposition of taxes by the competent authority.

এ বিষয়ে আপনাদের Maxim বলছি| Latin Maxim অনুযায়ী বিশ্বখ্যাত Miranda vs Ariznana এবং কলকাতার D.K Basu vs State of Calcutta এর বিচার/রায়ের উদাহরণ/উদ্ধৃতি নিম্নে দেওয়া হলোঃ

ক। Salus populi suprema lex. The welfare of the people (or, the public welfare) is the highest law. Private or individual rights and interests must always give place to the public welfare.

খ। Salus reipublicae suprema lex. The welfare of the state (or, the public welfare) is the highest law. This maxim is akin to the preceding maxim, and implies it. Wherever the interest of the State comes into conflict with the rights of individuals, the former must prevail and the latter yield.

আসুন সবাই মিলে আমরা দেশকে ভালবাসি। আমরা যে দলেরই হই না কেন, দেশের স্বার্থে নিজ ও জনগনের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সবাই এক সুরে কথা বলি। দেশ নিরাপদ থাকলে আমার সন্তান, পরিবার ও প্রজন্ম নিরাপদ থাকবে। আসুন এ দেশে সবাই মিলে দেশের ঋণ শোধ করি, দেশের নিরাপত্তা ও মানুষের ভালো চিন্তা করে, নিজের জন্য এবং দেশের স্বার্থে।

comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here