বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের রাজাকারদের সাথে নিয়ে রাজনীতি করে দেশবাসীর কাছে বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন খোকা। খালেদা জিয়ার একান্ত আস্থাভাজন এই নেতার দৃঢ় মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে গিয়েছিল গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাশেম, মুজাহিদ, সাঈদীর মত কুখ্যাত রাজাকারদের গোলামী করতে করতে। বিনিময়ে অনেক কিছুই অর্জন করেছেন তিনি। বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতা একাধারে অখন্ড ঢাকার মেয়র এবং মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা এক নজিরবিহীন ঘটনা। ১/১১’র পর খোকার ভূমিকা ছিল রহস্যময়। আব্দুল মান্নান ভুঁইয়ার মত তিনিও খালেদা-তারেকমুক্ত বিএনপি গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু আবহাওয়া বদলে যাওয়ায় দ্রুত নিজের ভোল বদলে ফেলেন। খালেদা জিয়ার বদান্যতায় পুনরায় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পরপর অনেকগুলো মামলা হয়। এসব মামলার তদন্ত শুরু হলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। ২০১৯ সালের ৪ঠা নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থেকেই বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সেখানে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপাকে ফেলতে তিনি সেখান থেকে দলের নেতাকর্মীদের নাশকতার নির্দেশ দিতেন।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার সাথে খোকার ফোনালাপ ফাঁস হয়। তাতে বিএনপির আন্দোলন চাঙ্গা করার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। বিএনপির দাবি মানতে বাধ্য করাতে, সরকার ফেলতে পেট্রোল বোমার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ্ডগোল পাকিয়ে ২/৩টি লাশ ফেলার পরিকল্পনা করা হয় সেসময়। এর পরেও তিনি বহাল তবিয়তে বিলাসী জীবনযাপন করতেন যুক্তরাষ্ট্রে। তার পরিবারের লোকজন প্রায়শ সেখানে গিয়ে তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করত। এমনকি পলাতক আসামী খোকার মৃত্যুর পর বাংলাদেশ সরকার সরকারের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় লাশ দেশে এনে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
[যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি নেতা খোকার পাচারকৃত শতকোটি টাকার সম্পত্তির হদিস, দায়িত্ব নিচ্ছে না পরিবার]
এই সাদেক হোসেন খোকা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। পরবর্তীতে পলাতক থাকা অবস্থায় নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ কেনেন সেখানে। শোনা যায়, অনেক বিএনপি নেতা তাদের পাচারকৃত অর্থে খোকার মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশে সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। সম্প্রতি মার্কিন সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে সেখানে খোকার একাধিক বাড়ি ও সম্পদের খবর পাওয়া গেছে বলে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির বরাতে জানা গেছে। কিন্তু খোকার পরিবার এসব সম্পদের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না দুর্নীতির মামলার ভয়ে। মালিক খুঁজে পাওয়া না গেলে যুক্তরাষ্টের আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র এসব সম্পত্তি অধিগ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, খোকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইউর্কের কুইন্সে থাকতেন। সেখানে একটি দোতালা বাড়িতে দীর্ঘদিন অবস্থান করেছেন। বাড়িটি খোকার মৃত্যুর পর এখনো ফাঁকা পড়ে আছে। স্থানীয় এক বাংলাদেশি ব্যক্তি বাড়িটি দেখভাল করেন। তিনি জানিয়েছেন, বাড়িটির মালিক খোকা। তিনি এটি দেখভাল করেন। কিন্তু বাড়ির কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী বিএনপির এক নেতার নামে বাড়িটি ক্রয় করা হয়েছিল।
প্রশাসনের জিজ্ঞাসাবাদে আইনি ঝামেলা এড়াতে বিএনপির ওই নেতা বাড়ির মালিকানার তথ্য অস্বীকার করে বলেন কীভাবে তার নাম এলো বাড়ির কাগজে, তা তিনি জানেন না। জানা গেছে, নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে খোকার মালিকানায় ৩টি দোকান আছে। সেগুলোও বিএনপির ২ জন নেতার নামে কেনা হয়েছে। কিন্তু সেই বিএনপি নেতাদের অর্থের উৎস জানাতে নোটিশ দেয়ার পর তারাও দোকানের মালিকানার কথা অস্বীকার কর বলেছেন, তারা দোকানের মালিক নন।
এছাড়া নিউইয়র্কে খোকার মালিকানাধীন ২টি গ্যাসস্টেশন রয়েছে, যা রাজনীতির সাথে জড়িত নন এমন এক গ্রোসারি ব্যবসায়ীর নামে। সেই ব্যবসায়ী তার আয়ের উৎস দেখাতে না পেরে গ্যাসস্টেশনের মালিকানার কথা অস্বীকার করেছেন যথারীতি। মূলত বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে নামে-বেনামে যেসব সম্পত্তি অর্জন করেছিলেন সাদেক হোসেন খোকা, সেসব এখন মার্কিন সরকারের হস্তগত হয়ে যাচ্ছে বৈধ আয়ের উৎসের সাথে এসব সম্পদের মালিকানার যোগসূত্র না থাকায়। যে সম্পদ গড়েছেন খোকা, তার পরিবারও তা ভোগ করতে পারছেনা কাগজপত্রে অন্যদের নাম থাকায়।
[যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি নেতা খোকার পাচারকৃত শতকোটি টাকার সম্পত্তির হদিস, দায়িত্ব নিচ্ছে না পরিবার]
জ্যাকসন হাইটসে ব্যবসা করেন, বিএনপির এক সাবেক নেতা জানান, খোকা মেয়র থাকা অবস্থাতেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। ফলশ্রুতিতে তিনি ২০০১ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্নভাবে সম্পত্তি করেছিলেন। ধীরে ধীরে এই সম্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধিও করেছিলেন। তার পরিবারের লোকজন প্রায়ই সেখানে যাওয়া-আসা করতেন। স্ত্রী ও দুই ছেলে-এক মেয়ের সবার নামেই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে অঢেল সম্পত্তি রেখে গেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা শুরু হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি বিলাসী জীবনযাপন করতেন। এসব সম্পদ থেকে তিনি দলের জন্য খরচ করতেন। বিএনপির বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ যোগাতেন। ২০১৩-২০১৫ পর্যন্ত দেশজুড়ে যে জ্বালাও-পোড়াও করেছিল বিএনপি, সেসময় খোকা প্রচুর অর্থ পাঠিয়েছেন বলে জানান বিএনপির রাজনীতি পরিত্যাগ করা এই সাবেক নেতা।
আরও পড়ুনঃ
নিরীহ মুসলিম ফিলিস্তিনিদের গণহত্যায় সমর্থন দিচ্ছেন মির্জা ফখরুল ও তার দল বিএনপি!
বিএনপির মহাযাত্রা : রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক? নাকি ভয়ঙ্কর কিছুর অপেক্ষায় বাংলাদেশ
চোখে টিনের চশমা থাকার কারনে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের দোষ দেখেনা !