বিএনপির গণশত্রুতে পরিণত হলেন গয়েশ্বর ও আমান

0
114
বিএনপি

বিএনপির অত্যন্ত প্রভাবশালী দুই নেতা- খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কামান খ্যাত আমানউল্লাহ আমান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের প্রতি সরকার যে সহানুভূতি এবং সৌহার্দ্য দেখিয়েছে তা ভালভাবে নেয়নি দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। অনলাইনে-অফলাইনে চলছে তুমুল সমালোচনা। দলের কর্মীরা যখন রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে, তারেক রহমানের নির্দেশ অনুসারে যানবাহন ভাঙচুর, আগুন দিয়ে ঢাকাজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে তীব্র রোদ-গরম উপেক্ষা করে, ঠিক সেসময় দলের প্রধান দুই নেতা আমান ও গয়েশ্বর সরকারের আতিথেয়তা গ্রহণ করছেন, আমান পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে তাদের গাড়িতে করে অযথা হাসপাতালে গিয়ে ঢুকেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব তাকে দেখতে গিয়েছেন উপহারসামগ্রী নিয়ে, অন্যদিকে গয়েশ্বর নিজ দলের কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হবার পর ডিবি পুলিশের আশ্রয় নিয়েছেন, পরে পুলিশের কার্যালয়ে পাঁচ তারকা হোটেল থেকে আনা ২৫ পদের খাবার নিয়ে ভুিরভোজ করছেন- এসব দৃশ্য দেখে তীব্র সমালোচনা চলছে।

আমান ও গয়েশ্বরকে সরকার কিনে নিয়েছে বলেও কথা উঠেছে। এমনকি দুজনই দলের কর্মসূচি পণ্ড করতে সরকারের সাথে হাত মিলিয়েছেন বলে তাদেরকে ‘গণশত্রু’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির প্রবাসী নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন।

মূলত এরপরই ভোল বদলান আমান ও গয়েশ্বর। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো উপহার গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা ধন্যবাদ দিয়েছিলেন আমান, যা গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছিল, সেখানে তিনি রাত পার হতেই পল্টি দিয়ে দাবি করলেন, তিনি হাসপাতালে ঘুমাচ্ছিলেন, সেসময় কে বা কারা উপহার নিয়ে এসেছে তিনি জানেন না। অথচ প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে আমান প্রধানমন্ত্রীর সচিবের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে হাসিমুখে কথা বলছেন, তার দেয়া জুস পান করছেন। অন্যদিকে ডিবি কার্যালয়ে ২৫ পদের খাবার দিয়ে লাঞ্চ করা গয়েশ্বরও নেতা-কর্মীদের রোষানল থেকে বাঁচতে ফেসবুক লাইভে বলেছেন তিনি নাকি তারকা হোটেলের খাবার খাননি। খাবার খাইয়ে ছবি তোলাও নাকি উচিৎ হয়নি। অথচ ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় খাসির বড়সড় একটি লেগপিস খুব আরাম করে চিবোচ্ছেন।

[বিএনপির গণশত্রুতে পরিণত হলেন গয়েশ্বর ও আমান]

বিএনপির এই দুই নেতার কাণ্ডে দলের সাধারণ নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা অনলাইনে-অফলাইনে মুখ দেখাতে পারছেন না। চারদিকে চলছে ট্রল। তবুও দলের নেতাদের ইজ্জত রক্ষার্থে এগিয়ে এসেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সংবাদ সম্মেলনে তার দলের নেতাদের খাবার ও ফুল পাঠানোর ঘটনাকে সরকারের নাটক দাবি করে মন্তব্য করেছেন। তার এসব বক্তব্য দলের সাধারণ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। তাদের কথায় ঘুরে-ফিরে আসছে একটিই প্রশ্ন- যখন বিনএপির নেতা-কর্মীরা রাজপথে পুলিশের বিরুদ্ধে লড়ছেন, তারেক রহমানের নির্দেশে আন্দোলন কর্মসূচির নামে নাশকতা চালাতে গিয়ে পুলিশের গ্রেপ্তার ও লাঠির বাড়ি খাচ্ছেন, তখন এই দুই নেতা কেন জামাই আদর পেলেন, সরকারের বিশেষ সহযোগিতা পেলেন তা নিয়ে বিএনপির মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। তাদেরকে কি বিশেষ কোনো লোভ দেখিয়ে বিএনপির সর্বনাশ করতে চাইছে সরকার- এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। এমনকি কর্মসূচিতে এই দুই নেতার কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

আলাদা আলাদা ভিডিওতে দেখা গেছে, আমান ও গয়েশ্বর দুজনই পুলিশের সাথে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে গণমাধ্যমের ক্যামেরা দেখামাত্রই রাস্তায় শুয়ে পড়েন আহত হবার ভঙ্গিতে। সেসময় পুলিশ কর্মকর্তারাও তাদের নিয়ে হাসাহাসি করতে করতে বলছিলেন নাটক বন্ধ করতে। তারপর তারা সত্যি সত্যিই নাটক বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালেন এবং পুলিশ তাদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়। কেন বিএনপির নেতারা এমন হাস্যকর নাটক করতে গেলেন- তা নিয়ে বিরক্ত বিএনিপর কর্মী-সমর্থকরা।

দীর্ঘদিন ধরেই আমানের সাথে সরকারের গোপন সম্পর্ক নিয়ে বিএনপির মধ্যে কানাঘুষা ছিল। এ নিয়ে দলীয় ফোরামে প্রকাশ্যে চর্চা চলত। আমান-এর আগে বলেছিলেন ১০ই ডিসেম্বর থেকে খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। তার এই কথা বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলেছিল বলে বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন। বিএনপিকে নিয়ে মানুষ যে হাসি-ঠাট্টা করে, বিএনপির আন্দোলন-কর্মসূচি যে পুরোপুরি হাস্যকর কথাবার্তা, তা ১০ই ডিসেম্বরের ব্যর্থতার কারণেই বলে মনে করেন কর্মী-সমর্থকরা। কারণ আমানের নাটুকে বক্তব্যে বিএনপিকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল কর্মীরা। যা অবাস্তব কল্পনা, তাকে বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে বিএনপিকেই হাস্যকর বানিয়ে ফেলার সব দায়ভার আমানের ঘাড়ে।

তাছাড়া আমানকে ১০ই ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়। অথচ মির্জা ফখরুলকে আটকে রাখা হয়েছিল, পরে জামিনে মুক্তি পান। তাই সরকারের সাথে আমানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে গুঞ্জন এখন বেড়েছে। এছাড়া গয়েশ্বরকে বিএনপিতে সবসময় ভিন্ন চোখে দেখা হয়। দলের বিভিন্ন ব্যাপারে তার সোজাসাপ্টা সমালোচনা নিয়ে সরকারের সাথে গোপন আঁতাত রয়েছে বলে কেউ কেউ সন্দেহ করেন। ফলে দলের স্থায়ী কমিটিরই কয়েকজন মনে করছেন, সরকারের সাথে গোপন যোগাযোগ রয়েছে এমন নেতাদেরকে সরকার এ মুহূর্তে ব্যবহার করছে বিএনপির বিরুদ্ধে।

[বিএনপির গণশত্রুতে পরিণত হলেন গয়েশ্বর ও আমান]

এদিকে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের একজন নেতা সরাসরি বলেছেন, আমানউল্লাহ আমান যেভাবে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিলেন উপহার পেয়ে, খোঁজ-খবর নেয়ায় আবার আজ পল্টি দিলেন সমালোচনা হবার পর, তাতে সন্দেহ তো থাকেই। আবার গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও যেভাবে ডিবি অফিসে আপ্যায়িত হয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে আন্দোলন-কর্মসূচি তার কাছে বড় কথা নয়, ভুরিভোজই তার কাছে প্রাধান্য পেয়েছে। লোভনীয় খাবার দেখে মজে গেছেন নাকি সরকারের সাথে মিলেঝুলে কোনো পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন গয়েশ্বর, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।। এই নেতারা কীভাবে সরকার পতনের আন্দোলন করবে তা আমার বোধগম্য নয়।

উলেখ্য, শনিবার ২৯শে জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচীতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে হামলা থেকে নিরাপদ রাখার জন্য সরিয়ে নেয় পুলিশ। তাকে গাড়িতে করে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুশিলের (ডিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তিনি মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন। অন্যদিকে দলীয় কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশের আশ্রয় চাওয়ায় ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানকে গাড়িতে করে সরিয়ে নেয়া হয়। পরে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে বিশ্রাম নেন। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব আমানকে দেখতে যান। এসময় তিনি বিএনপি নেতাকে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো দুপুরের খাবার, বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী ফল ও জুসের এক বুকেট তুলে দেন।

আরও পড়ুনঃ

কানাডার আদালতে স্বীকৃতি দেওয়া সন্ত্রাসী দল বিএনপি ২০২৩ সালে এসে আবারও দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে ২০০৪ সালের মতো সেই পুরনো পথে হাঁটছে

নেতৃত্বহীন ছন্নছাড়া দল বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিপুল অর্থের যোগান আসছে যেভাবে

বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দেখে দলের নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ তারেকের!

comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here