বাংলাদেশের অর্থনীতি, রিজার্ভ, রেমিট্যান্সসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গত এক বছর ধরে লাগাতার বিএনপি-জামায়াতের অর্থায়নে পরিচালিত গুজবসেল-এর অপপ্রচার ও মিথ্যাচার চলছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর প্রজ্ঞাপন ও বিজ্ঞপ্তির পরেও ফেসবুক ও ইউটিউবে গলাবাজি করা গুজবসেল-এর বেতনভুক ‘ইউটিউমার’ গোষ্ঠী চালিয়ে গেছে তাদের মিথ্যাচার। বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত গুজবসেল-এর ইউটিউমাররা জনগণকে বোকা ভাবে, তাই দুদিন পর পর নতুন মিথ্যাচার চালায়। যদিও স্মার্ট বাংলাদেশের জনগণ এখন অনেক সচেতন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও অর্থনীতি বিষয়ক বিভিন্ন ফোরামের ডাটা অ্যানালাইসিসের ওপর নজর রাখেন তারা।
সম্প্রতি কানাডিয়ান অনলাইন প্রকাশনা ‘ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট’ তাদের ‘দ্য টপ হেভি গ্লোবাল ইকোনমি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ-এর পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দুটিমাত্র দেশ বাংলাদেশ ও ভারত ৫০টি বৃহত্তম অর্থনীতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আইএমএফ-এর পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট গত ২৯শে ডিসেম্বর এই তথ্য জানিয়েছে। দেশগুলোকে মোট দেশীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ৪৬০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জিডিপি নিয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪১তম। বাংলাদেশের নিচেই রয়েছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর যথাক্রমে ৩৬ এবং ৩৭ নম্বর অবস্থানে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে ৫ম স্থানে চলে গেছে। এর আগে দেশটি ছিল ৬ষ্ঠ অবস্থানে। ২০২২ সালে ভারত ৩.৪৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার জিডিপি নিয়ে যুক্তরাজ্যকে (ইউকে) ছাড়িয়ে ৫ম স্থান দখল করেছে। তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও জার্মানি। বিশ্বের ১০টি বৃহত্তম অর্থনীতির বাকি ৫টি দেশ যথাক্রমে- যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া ও ইতালি।
[অর্থনীতির আকারে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ: আইএমএফ রিপোর্ট]
প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২২ সালে বিশ্বে দুটি বড় ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি হলো- বিশ্বের জনসংখ্যা ৮ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। দ্বিতীয়টি হলো- বিশ্ব অর্থনীতির আকার ১০০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে ১০১.৫৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ বিরোধী গুজবসেল চক্রের বেতনভুক ইউটিউমারদের মুখে ছাই ঘষে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে বিশ্বের মাঝে মাথা উঁচু করে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রার পেছনে বড় অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্তিশালী নেতৃত্ব ও দূরদর্শী চিন্তা ভাবনার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের শক্তিশালী রেকর্ড দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মাঝেও উন্নয়নের শক্তিশালী রেকর্ড প্রদর্শন করে চলেছে দেশটি। সংবাদমাধ্যম এশিয়ান লাইট ইন্টারন্যাশনাল তাদের এক নিবন্ধে এই তথ্য সামনে এনেছে।
২০২৩: হাসিনা রিবুটস বাংলাদেশ শীর্ষক নিবন্ধে বলা হয়েছে, শক্তিশালী জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ, শক্তিশালী তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) ও এর রপ্তানি, স্থিতিশীল রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা গত ২০ বছরে বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়েছে বলে এশিয়ান লাইট ইন্টারন্যাশনাল তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। নতুন নতুন ফ্লাইওভার, সেতু এবং বাণিজ্যিক বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একটি ‘উল্লেখযোগ্য রূপান্তর’ ঘটেছে। এছাড়া পদ্মা নদীর ওপর ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল-সড়ক সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় গত বছরের ২৫শে জুন।
এশিয়ান লাইট ইন্টারন্যাশনালের মতে, স্বাধীনতার পর থেকে এই সেতুটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ার সর্বকনিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই অঞ্চলে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছে।
এশিয়ান লাইট ইন্টারন্যাশনালের নিবন্ধে বলা হয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন-আয়ের এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম-আয়ের-উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। অতীতে বাংলাদেশ কেবলই প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্যই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এসেছে। আর এই দেশটিই এখন লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের খপ্পর থেকে বের করে আনা এবং ৬.৬ শতাংশেরও বেশি গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাক্ষী হয়েছে। এমনকি মিয়ানমার থেকে ১১ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে আশ্রয়ও দিয়েছে বাংলাদেশ।
এশিয়ান লাইট ইন্টারন্যাশনালের নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির শীর্ষ ১০টির মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির মতে, আন্তর্জাতিক পেশাদার পরিষেবা ব্র্যান্ড প্রাইসওয়াটারহাউসকুপার্স এর দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৮তম বৃহত্তম অর্থনীতি হবে।
[অর্থনীতির আকারে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ: আইএমএফ রিপোর্ট]
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার রপ্তানিমুখী শিল্প সম্প্রসারণ এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করতে ২০১০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন প্রণয়ন করে।
গত ২৫শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন। মূলত দশমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গণভবনে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে এশিয়ান লাইট ইন্টারন্যাশনালের নিবন্ধে বলা হয়েছে, কারও এতবার (নেতৃত্বের) দায়িত্ব নেওয়া উচিত না। কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি দায়িত্বটি গ্রহণ করেছি। আপনাকে বুঝতে হবে, আমি বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। এছাড়া জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসকে আওয়ামী লীগের ‘সবচেয়ে বড় শক্তি’ বলেও অভিহিত করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাদের দল জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে এবং আর তাই আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার জন্য দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুনঃ
যে কারণে পদ্মা সেতুকে ‘দ্য লোয়েস্ট কস্ট ব্রিজ’ বলছেন বিশ্বসেরা প্রকৌশলীরা
দুর্জনের মুখে ঝামা ঘষে যেভাবে সঙ্কট মোকাবেলা করছেন শেখ হাসিনা