স্পেশাল রিপোর্ট: সিআইএ এজেন্টের কাছ থেকে জব্দকৃত নথিতে ভয়ঙ্কর ব্যক্তির তালিকায় আজও এক বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যাক্তির নাম!

0
318
সিআইএ

বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভয়ঙ্কর ব্যক্তিদের তালিকা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। মার্কিন সরকার ও পেন্টাগনের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে সিআইএ’র বিশেষ তালিকায় বাংলাদেশে তখনকার রাষ্ট্রীয় মদদে সৃষ্ট জঙ্গি সংগঠন জেএমবির দুই শীর্ষ জঙ্গি- শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাই-এর নাম উঠে আসে ভয়ঙ্কর ব্যক্তি হিসেবে। আর তৃতীয় নামটি ছিল তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কুলাঙ্গার পুত্র তারেক রহমানের।

সিআইএ’র দক্ষিণ এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স-এর টেরোরিজম বিষয়ে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেস্ক নথিটি প্রণয়ন করেন বলে জানা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের বরাতে ইউএসএ টুডে জানায়, ডাবল এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অপরাধে ২০১৮-তে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে আটক হন সিআইএ এজেন্ট জেরি চান শিং লি। তার কাছ থেকে জব্দকৃত ৫ হাজার গোপন নথির মধ্যে যুক্তরাজ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কিত নথিতে তারেক রহমান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় না থাকলেও তারেক রহমানের নাম সিআইএ’র তালিকা থেকে বাদ যায়নি ২০১৮-তেও।

আরও পড়ুন: জেএমবির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তারেক রহমান: উইকিলিকসের নথি ফাঁস

এর আগে সিআইএ‘র সূত্রে বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর ব্যক্তি হিসেবে ২০০৩ সালে (বিএনপি-জামায়াত আমলে) জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাই সম্পর্কে বাংলাদেশকে বিশেষ সতর্ক বার্তা দিয়েছিল এফবিআই। সেসময় বিএনপি-জামায়াত সরকার জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিল। এমনকি গণমাধ্যমে খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, বাংলাভাই বলে কেউ নাই, এসব মিডিয়ার সৃষ্টি। সেসময় বিবিসিতে কাজ করা সাংবাদিক তাসনিম খলিল (বর্তমানে সুইডেন পলাতক) তারেক রহমান সম্পর্কে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, জঙ্গি বাংলাভাই ‘মামা’ ডাকতেন তারেককে, নিয়মিত তাদের যোগাযোগ হয়।

সিআইএ’র সাবেক কর্মকর্তা জেরি চান শিং লি’র কাছ থেকে জব্দৃকত নথি থেকে জানা যায়, তারেক রহমান সম্পর্কে সতর্ক থাকতে ইতিপূর্বে (২০০৩ সালে) বাংলাদেশ সরকারকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছিল। সতর্ক বার্তায় বলা হয়, তারেক রহমানের অনুগত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের দ্বারা যেকোনো সময় বাংলাদেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে।

সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে চলে যাবার পরেও তারেক রহমানের ওপর নজর ছিল সিআইএ’র। যুক্তরাজ্য সরকারকেও তারেক সম্পর্কে সতর্ক করা হয়। বলা হয়, তারেকের যেসব অনুসারী ঘন ঘন লন্ডনে সফর করেন, তাদের যোগসাজশে বাংলাদেশে একটি ক্যু চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটানোর একটি পরিকল্পনা চলছে যুক্তরাজ্যের মাটিতে। ঘটতে পারে নাশকতার ঘটনাও, যা হতে পারে বাংলাদেশের মাটিতে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এই পরিকল্পনায় তারেককে দুটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সহযোগিতা করছে, এমন তথ্যও ছিল সেই নথিতে।

আরও পড়ুন: দেশবিরোধী প্রচারণার জন্য আমেরিকার ৩টি ফার্মকে ৩১ কোটি টাকা দেয় বিএনপি

বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় না থাকলেও কেন সিআইএ তারেক রহমান সম্পর্কে ‘ইন্টারেস্টেড’ সে সম্পর্কে নোট ছিল নথিতে। তা থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের ওপর নজরদারি রেখেছে সিআইএ। বাংলাদেশে বসবাসকালেও তারেকের ওপর নজরদারি ছিল সিআইএ’র।

এমনকি বাংলাদেশে দায়িত্বরত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির ওয়াশিংটনে পাঠানো গোপন তারবার্তার কথা ইতিমধ্যে সবাই জানেন। উইকিলিকস কর্তৃক ফাঁস হওয়া সেই নথিতেও তারেক রহমানকে ‘নটোরিয়াস’ পার্সন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই সাথে বলা হয়েছিল, তারেক রহমানের পক্ষে যে কোনো ধরণের অপতৎপরতা চালানো সম্ভব। তার সাথে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার স্বার্থ-পরিপন্থী (তৎকালীন) যে কোনো ধরণের কর্মকাণ্ড পরিচালনার সম্ভাবনাও দেখেছে সিআইএ। সেজন্য তার ওপর নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সিআইএ‘র দীর্ঘ নজরদারির মধ্যে কয়েক দফা দাখিলকৃত প্রতিবেদনে তারেক রহমান এখনও বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত। বাংলাদেশের আদালত কর্তৃক সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার কারণে শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাইর নাম এই তালিকা থেকে অনেক আগেই বাদ পড়েছে।

[স্পেশাল রিপোর্ট: সিআইএ এজেন্টের কাছ থেকে জব্দকৃত নথিতে ভয়ঙ্কর ব্যক্তির তালিকায় আজও এক বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যাক্তির নাম!]

লন্ডনে থিতু হওয়ার আগে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় সরকারী মদদে বিদেশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে তারেকের নিয়মিত যোগাযোগ ও বৈঠকের তথ্য রয়েছে এসব নথিতে। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতায় তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশনা ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে জেরি চান শিং লি’র কাছ থেকে জব্দকৃত সেই নথি থেকে।

আরও পড়ুন: জিয়াউর রহমান যেমন ১৫ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড, তার পুত্র তারেক রহমান তেমনই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড

আটকের পর সিআইএ‘র এজেন্ট জেরি চান শিং লি যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ বিষয়ে তারেক রহমান সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য প্রদান করেন। যাতে বলা হয়, তারেক শুধু বাংলাদেশ সরকারের জন্যই নয় যুক্তরাজ্য সরকারের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন। তিনি বাংলাদেশে সরকার পতনের লক্ষ্যে একই সাথে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। যেকোনো সময় তারেক রহমান সর্বোচ্চ ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারেন বলে ওই নথিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন:





comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here