জিয়ার কফিনে লাশ নয়, ছিল পতেঙ্গা থেকে আনা চারটি পচা তরমুজ

0
77
জিয়া

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার অবমুক্ত করা নথি থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের জীবনের শেষ অধ্যায় সম্পর্কে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছিল বছরখানেক আগে। বিএনপির দাবিকৃত জিয়ার কবরে যে আসলে জিয়ার লাশ ছিল না, সেটা সিআইএ’র সেই নথি থেকে স্পষ্ট হয়। তারেক রহমানের বারবার অনুরোধের পরেও চট্টগ্রাম থেকে আনা সেই কফিনের ঢাকনা খোলা হয়নি, দেখানো হয়নি লাশের মুখ। সেভাবেই দাফন করা হয় চন্দ্রিমায়। উপস্থিত কারোই সেই কফিনের ঢাকনা খোলার অনুমতি ছিল না।

কেমন হয়েছিল খুনি-স্বৈরাচার জিয়ার পরিণতি? অবমুক্ত করা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র প্রতিবেদন থেকে দেখা যাক।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, ১৯৮১ সালের ৩০শে মে জিয়াউর রহমানকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে হত্যা করা হয়। হত্যার পরপরই সার্কিট হাউজের নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহী সৈনিকরা। এ সম্পর্কে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ডিসক্লোজড নথি থেকে জানা যায়, জিয়ার লাশটি গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। একজন সৈনিক ‘উপরের নির্দেশে’ জিয়ার লাশ পুড়িয়ে ফেলেন। পরে সেই ছাইভস্ম রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ি এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এর পেছনে মূল কারণ ছিল জিয়ার লাশ নিয়ে যেন কোনো রাজনীতি করা না হয়। এমনকি জিয়াকে প্রথম যেখানে ‘দাফন’ করা হয়েছিল বলে দাবি হচ্ছে- চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়, সেখানেও জিয়ার মরদেহ ছিল না বলে একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণা এবং অনুসন্ধানে পাওয়া যায়। তাহলে সেখানে আসলে কার লাশ ছিল- এটি এখনও পর্যন্ত এক বিতর্কিত প্রশ্ন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেই রাতে জিয়ার অনুগত সৈনিকদেরও হত্যা করা হয়েছিল। কমব্যাট ড্রেস পরা তেমন কারো লাশই রাঙ্গুনিয়ায় জিয়ার নামে ‘দাফন’ করা হয়েছিল।

একটি বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, জিয়ার মৃত্যুর পর সেখানে যারা ছিলেন, তারা কেউই তার লাশ দেখেননি। বিএনপির দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য- ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী (সাবেক রাষ্ট্রপতি) দুজনই জিয়ার মৃত্যুর সময় চট্টগ্রামে ছিলেন। নিহত হওয়ার আগে অনেক রাত পর্যন্ত নাজমুল হুদার সাথে বসে মদ্যপান করেছেন জিয়া। আলাপচারিতার পর হুদা চট্টগ্রাম শহরে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন সার্কিট হাউজে জিয়ার পার্শ্ববর্তী অপর একটি কক্ষে। তারা কেউই জিয়াউর রহমানের মরদেহ দেখেননি।

জিয়ার কফিনে কি ছিলো আসুন সত্য জানি । MajorZia

তাহলে জিয়ার মরদেহ দেখলো কে?

মার্কিন গোয়েন্দ নথি বলছে, জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যার পর বিদ্রোহ দমন করা হলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় গিয়ে কমব্যাট ড্রেস পরা একটি মরদেহ তুলে আনা হয়। কিন্তু সেটি জিয়ার মরদেহ ছিল না। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে পোস্টমর্টেম করতে হয়। কিন্তু জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে পোস্টমর্টেম করার কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। ফলে রাঙ্গুনিয়ার সেই মরদেহটি ঢাকায় নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। সম্ভাবনা ছিল যে, জানাজার আগে জিয়া পরিবারের কেউ যদি কফিনের ঢাকনা খুলতে চাইতে পারে। তাই আগে থেকেই দাবি করা হয়েছিল, গোলাগুলিতে দেহ সম্পূর্ণ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, তাই কফিন খোলার অনুমতি দেয়নি সেনাবাহিনী।

গতবছর এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টটি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, রাঙ্গুনিয়ায় যাকে জিয়া বলে দাফন করা হয়েছিল, তার পরনে কমব্যাট ড্রেস (সৈনিকদের যুদ্ধকালীন ইউনিফর্ম) ছিল। একজন রাষ্ট্রপতি মাঝরাতে নিশ্চয় কমব্যাট ড্রেস পরে ঘুমাতে যান না। তাছাড়া রাষ্ট্রপতির পদে দখল করার পর থেকে জিয়া কমব্যাট ড্রেস পরা বন্ধ করে দেন। তার মানে, জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কোনো এক সৈনিক- যিনি ওই সময় গোলাগুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাকেই রাঙ্গুনিয়ায় সমাধিস্থ করা হয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ

কিভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল ডিক্টেটর জিয়া

গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলের কণ্ঠরোধ করেন জিয়াউর রহমান

সম্প্রতি জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য যে কফিনটি প্রস্তুত করা হয়েছিল, তাতে কোনো লাশ ছিল না। কারণ, সেই রাতে প্রচন্ড গোলাগুলিতে জিয়া এবং তার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের লাশগুলো এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে, শরীরের অংশগুলো ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। অপারেশনের পর টুকরো অংশগুলো সব জড়ো করে আর্মি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রাঙ্গুনিয়ায়। সেখানে একসাথে দাফন করে দেয়া হয় সবার শরীর। সেখান থেকে কারো লাশ আলাদা করে শনাক্তের উপায় ছিল না।

আর সেজন্যই কফিনে বিশালাকৃতির ৪টি পচা তরমুজ ভরে ঢাকনায় পেরেক ঠুকে দেওয়া হয়। পতেঙ্গায় উৎপাদিত এই তরমুজগুলো সার্কিট হাউজের ভাঁড়ার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। এরপর সেই কফিন ঢাকায় এনে চন্দ্রিমা উদ্যানে দাফন করার আগে আর ঢাকনা খোলা হয়নি। তাই লাশের মুখ কেউ দেখেনি। কিছুদিন আগে এক সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানও বলেছেন, জিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর লাশের চিহ্ন না পাওয়ায় তার কফিনে লাশের বদলে চারটি পচা তরমুজ রাখা ছিলো।

বিএনপির রাজনীতি লাশের রাজনীতি, দেখুন প্রমান

চিকিৎসকদের মতে, এসব ক্ষেত্রে পোস্টমর্টেম রিপোর্টটি অত্যন্ত জরুরী। পোস্টমর্টেম করলেই তিনি আদৌ জিয়াউর রহমান কি না, তা বোঝা যেত। কিন্তু কোনো সুরতহাল এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্টও করা হয়নি। যার ফলে জিয়ার কবর আসলে কোথাও নেই বলে প্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে, সেটিই আসল সত্য বলে মত বিশ্লেষকদের।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, রাজনৈতিক মঞ্চে বিএনপি সব সময় কিছু কিছু অভিযোগ-অনুযোগ করে। নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, গুম-খুন, নির্যাতন ইত্যাদি অনেক কিছুই। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার স্বামী জিয়াউর রহমানের হত্যার বিচার চাননি। পুত্র তারেক রহমানও কখনও এ নিয়ে আলাপ তোলেননি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতেও এই মামলা নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি। নথিপত্র অনুসন্ধান করেনি, তদন্ত পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় রহস্যজনক কারণে। এ বিষয়ে অসন্তোষ আছে বিএনপির ভেতরেই। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে এই মামলা উত্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে মামলার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

অনেকের অভিযোগ, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসে কি না- এই চিন্তা থেকেই বিএনপি কখনও দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হত্যার বিচার চায়নি। কিন্তু তাকে নিয়ে রাজনীতিটা ঠিকই জিইয়ে রেখেছে। দলের কর্মসূচিতে এক দৌড়ে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার মাজারে হাজির হন নেতা-কর্মীরা। কিন্তু সামরিক অভ্যুত্থানে দলের প্রতিষ্ঠার হত্যার কোনো বিচার চান না তারা। এমনকি দেহাবশেষ উত্তোলন করে ডিএনএ পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন অনেকেই, কিন্তু বিএনপি তাতেও রাজি হয়নি। তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে এসব নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ

বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বপ্রথম সুইস ব্যাংকে অবৈধ টাকা রাখেন খালেদা জিয়ার বড় পুত্র তারেক রহমান

অনুসন্ধানঃ ৯টি বিদেশি ব্যাংকে ড. ইউনূসের ৭৫ কোটি টাকার সন্ধান

জিয়ার আমলে বিচার বহির্ভূত গুম-খুনের ইতিহাস : মানবাধিকারের দোকানদাররা কোথায়?

comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here