জ্বালানি তেল ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন ও অকটেনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। বাড়ানোর হার ৪০ শতাংশের বেশি। জ্বালানি তেলের এই দাম বাড়ানোর বিষয়টিকে সরকারের কঠিন, কিন্তু সাহসী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
এই অর্থনীতিবিদের মতে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ছাড়া সরকারের কোনো উপায় ছিল না। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে পরিবহন খাত। প্রাথমিকভাবে চাপে পড়বে অর্থনীতি। তবে এক বছরের মধ্যে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে। লেনদেন ভারসাম্যে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা কমে আসবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা হবে শক্তিশালী।
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। উৎপাদন কাঠামোতে পরিবর্তন আসবে। ডিজেল থেকে সাবসিডিয়ারি প্রায় উঠে গেলো। এটার একটা প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে। তবে এটার দরকার ছিল।’
তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে প্রথমে অর্থনীতি একটু চাপে পড়বে। কিন্তু রিকভারির পথটা তৈরি হবে। আমি বলবো এটা একটা ভালো দিক। ইমিডিয়েট ইমপ্যাক্ট নেগেটিভ, কিন্তু এক বছরের মধ্যে এটার পজিটিভ ইমপ্যাক্ট আমরা দেখতে পারবো।’
আরও পড়ুনঃ
সরকারের কঠিন, কিন্তু সাহসী সিদ্ধান্ত’
বিএনপি যেভাবে দেশের বিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক গ্যাস ধ্বংস করেছিল
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এখন আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত এক্সচেঞ্জ রেট স্থিতিশীল করা। তেলের মূল্যবৃদ্ধি এটাকে সহায়তা করবে বড়ভাবে। কারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেবে সরকার। এতে কমে যাবে আমদানি। আর আমদানি কমলে আমাদের ব্যালান্স অব পেমেন্ট ঠিক হয়ে যাবে।’
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে আর্টিফিশিয়ালভাবে (কৃত্রিম) মূল্যস্ফীতি কমিয়ে রেখেছিলাম। পৃথিবীর সব দেশেই যখন জ্বালানি তেল ছিল মূল্যস্ফীতির মূল কারণ, আমাদের সরকার গত ছয় মাস সেটা হতে দেয়নি। এখন সেটার খেসারত দিতে হবে।’
‘সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে পরিবহনখাতে। কৃষিতে বেশিরভাগ পাম্প এখন ইলেক্ট্রিক হয়ে গেছে। হয়তো আগামীতে আরও ইলেক্ট্রিক হয়ে যাবে। কৃষিতে সরকারের যেটা করা উচিত, সেটা হলো সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে আসা। পাওয়ার পাম্পগুলো সোলার প্যানেল দিয়ে চালাতে হবে। এটার উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, এই উদ্যোগ আরও জোরদার করতে হবে। বছরে ৫০ হাজার করে করলে হবে না, আমাদের তো লাখ লাখ সেচ পাম্প আছে। লাখ লাখ সেচ পাম্পকে এখন বিদ্যুৎ থেকে সোলারে নিতে হবে- বলেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ।’
[জ্বালানি তেলের মূল্যসমন্বয় নিয়ে কি বলছেন অর্থনীতিবিদরা? কতটুকু যৌক্তিক এই মূল্য সমন্বয়?]
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। তবে দাম না বাড়িয়ে সরকারের উপায় ছিল না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সরকার দাম না বাড়ানোর বিষয়টি ছয় মাস ঠেকিয়ে রেখেছিল। আর ঠেকিয়ে রাখার উপায় ছিল না। এখন এটা (জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো) করায় সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা একটু শক্তিশালী হবে। কারণ আমদানি কমবে কিছুটা। জ্বালানির ওপর ভর্তুকি কমে যাবে। সরকারের বাজেট ব্যালান্স হবে। এগুলো কাজে লাগবে।’
‘কিন্তু যে জিনিসটা সরকারের করা উচিত ছিল, সেটা হলো এখন তেলের দাম বাজারভিত্তিক করে দেওয়া। বাজারের সঙ্গে তেলের দাম ওঠা-নামা করবে। এটা বাজারভিত্তিক করে দিলে বিশ্ববাজারে দাম কমলে তার সুফল ভোক্তারা পাবেন, না হলে ভোক্তারা তার সুফল পাবেন না।’
একবার দাম বাড়ার পর বিশ্ববাজারে দাম কমলেও তার সুফল দেশে পাওয়া যায় না, এমন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এটার কারণ আগে আমরা বাজারভিত্তিক করিনি, এ কারণে পায়নি। যদি বাজারভিত্তিক হতো তাহলে প্রত্যেক সপ্তাহে বা প্রত্যেকদিন আট আনা, চার আনা, এক টাকা, দুই টাকা বাড়তো-কমতো। তাহলে সহনীয় হয়ে যেত।’
[জ্বালানি তেলের মূল্যসমন্বয় নিয়ে কি বলছেন অর্থনীতিবিদরা? কতটুকু যৌক্তিক এই মূল্য সমন্বয়?]
তিনি বলেন, ‘এই যে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছিল, এখন কমছে, আরও কমবে। হয়তো বলতে পারেন, একটু ধীরে ধীরে কমছে। এর সঙ্গে আমি একমত, কিন্তু কমবে তো। না কমে তো পারবে না। আমদানি খরচ যখন কমবে, তখন এটা কমতে হবে।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, জ্বালানি তেলের বিতরণ ব্যবস্থায় অনেক চুরিচামারি হয়। সেগুলো বন্ধ করতে পারলে ভালো। সে কারণে শুধু বাজার ভিত্তি করা না, একই সঙ্গে ব্যক্তিখাতকে এখানে নিয়ে আসা দরকার। প্রতিযোগিতা করুক। আমাদের এলপিজিতে ব্যক্তিখাত এসেছে। এভাবে সরকার কেন এককভাবে আনবে, আরও দুটি কোম্পানিকে দিয়ে দিক। তারা যদি সস্তায় বিক্রি করতে পারে ভালো। আমেরিকায়ও ৮-১০টি ব্যক্তিখাতের কোম্পানি আছে।
আরও পড়ুনঃ
বিএনপির হয়ে নির্বাচন করতে অনাগ্রহী নেতারা
‘৭৫ এর পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যা যা করেছি, তার ফল ভুগছি’- তরিকুল ইসলাম
আন্দোলনে আগ্রহ নেই বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের,সাড়া নেই জনগণেরও