রাশিয়া ইস্যুতে বিভ্রান্তির বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি!

0
69
রাশিয়া ইস্যু

বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি সংকটে পড়ে, বিভ্রান্তির বেড়াজালে ঘুরপাক খেতে খেতে খেই হারিয়ে ফেলে। তারা কোন পক্ষে যাবে, কী সিদ্ধান্ত নেবে এ নিয়ে দলের মধ্যেই নানারকম ঝামেলা তৈরি হয়। এটি দলের চিন্তা-চেতনার সমন্বয়হীনতাকে উন্মোচিত করে।

সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ইস্যুতে একই ঘটনা ঘটেছে। রাশিয়া ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান কী- এ নিয়ে যেমন অস্পষ্টতা রয়েছে, তেমনি একেক নেতা একেক রকম বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তুলছেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপি আরও দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

রাশিয়ায় যখন ইউক্রেন আক্রমণ করে তখনও বিএনপির দুই নেতা এই আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে যখন দেখা যায়, চীন ও পাকিস্তান রাশিয়ার পক্ষে- তখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা চুপসে যান। রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পরপরই সেই দুই নেতার নিন্দাজ্ঞাপনকে বিএনপির নেতারা দাবি করছেন ব্যক্তিগত মতামত বলে, দলীয় অবস্থান নয়।

উল্লেখ্য, রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণ পরপরই বিএনপির দুই নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এই হামলার নিন্দা করে বিবৃতি দেন। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ইউক্রেনে অবস্থানকারী বাংলাদেশি জাহাজের এক নাবিকের মৃত্যু হয় রকেট হামলায়। এই ঘটনার পর বিএনপি নেতারা আবার রাশিয়া ইস্যুতে সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বিবৃতি দিয়েছেন।

কিন্তু রাশিয়া ইস্যুতে বিএনপির নিজস্ব বক্তব্য বা অবস্থান কী- এ নিয়ে তাদের কোনো নেতাই মুখ খুলতে রাজি নন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু রাশিয়া ইস্যুতে সাবেক এই বাম নেতা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কোনো বক্তব্য রাখছেন না।

একই অবস্থা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও। বিএনপি প্রথমে ভেবেছিল, রাশিয়া ইস্যুতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থানে যাবে এবং তাদের ভাষায় আগ্রাসনের বিরোধিতা করবে। এমন প্রস্তুতি ছিল তাদের। বিএনপির বকৃতাবাজ নেতা রুহুল কবির রিজভীও তার চিরাচরিত কাব্যিক ভাষায় বক্তব্য প্রদানের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থানে বাংলাদেশ | Russia Ukraine News | United Nations | Somoy TV

[রাশিয়া ইস্যুতে বিভ্রান্তির বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি!]

কিন্তু যখন দেখা গেল, যুদ্ধের আগ মুহূর্তে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রাশিয়া সফর করলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সমর্থন জানালেন, তখন বিএনপি বিভ্রান্ত হলো। একইভাবে চীন যখন রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তখন বিএনপির বিভ্রান্তি আরও বেড়ে গেল। বিএনপির নেতারা ভাবলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে গিয়ে তারা চীন এবং পাকিস্তান নাখোশ করছেন না তো!

রাশিয়ার যুদ্ধ উপমহাদেশের রাজনীতিতে অদ্ভুত এক মেরুকরণ তৈরি করেছে। এই অঞ্চলে পাকিস্তান-ভারত দুই দেশই জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের ভোটদানে বিরত থেকেছে। একই পথ অনুসরণ করেছে বাংলাদেশও। ফলে বাংলাদেশের যে নিরপেক্ষ অবস্থান, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়েছে।

বিএনপির নেতারা চেয়েছিলেন, এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আস্থাভাজন হতে প্রয়োজনে রাশিয়ার বিরোধিতা করবেন। কিন্তু যেহেতু চীন, পাকিস্থান এবং ভারত সরাসরি কোনো অবস্থান নিচ্ছে না তাই বিএনপি নেতারাও এখন বিভ্রান্তির বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছেন। ফলের রাশিয়া ইস্যুতে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য খাপছাড়া, অস্পষ্ট এবং উদ্দেশ্যহীন।

তবে শুধু রাশিয়া ইস্যু নয়, বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যে ঘটনাগুলো ঘটছে তাতে প্রায়ই বিএনপি একটি দিকভ্রান্ত রাজনৈতিক দল হিসেবেই নিজেদেরকে প্রমাণ করছে।

আরও পড়ুনঃ ‘ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ঠিকই আছে’

তবে বাংলাদেশ সরকারের নিরপেক্ষ থাকার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে।

বিবদমান দুটি দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে তৃতীয় দেশ হিসেবে নাক গলানো কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। ইউক্রেন-রাশিয়া, দুটি দেশই বাংলাদেশের মিত্র, দুদেশের সাথেই রয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক এবং দৃঢ় কূটনৈতিক সম্পর্ক, সেখানে একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে না গিয়ে আগ বাড়িয়ে দুই দেশের রাজনৈতিক সমস্যায় মন্তব্য করা হবে হঠকারিতা।

ইউক্রেনের পক্ষে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন রয়েছে সরাসরি; যে পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুদৃঢ়। আবার একাত্তরে পশ্চিমা বিশ্বকে প্রতিরোধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরাণ্বিত করা বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেড়েছে।

তাছাড়া বাংলাদেশের এ যাবৎকালের অতি স্পর্শকাতর প্রকল্পগুলোর একটি- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে কাজ করছে রাশিয়া, সেই সাথে বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের কয়েকটি দল রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পারমাণবিক প্রযুক্তির ওপর। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণের কাজটিও করছে রাশিয়া। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ এমন কোনো কূটনৈতিক অবস্থান নেবে না স্বভাবতই, যাতে সবদিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখানে বিএনপি স্রেফ উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করছে।

দেশের সচেতন নাগরিকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে বিএনপির এই নাটক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের পন্থা। তারা মূলত সরকারের কূটনৈতিক অবস্থানকে বিচ্যুত করে দেশের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার জন্যই এসব উসকানি দিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ

শেখ মুজিবের মতো মহামানব জীবনে আর দেখিনি: টিক্কা খান

বিএনপির হয়ে নির্বাচন করতে অনাগ্রহী নেতারা

আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছে বিএনপি

comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here