২০১৭ সালের জুলাই মাসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যুক্তরাজ্য সফরের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করা। এমনই এক গোয়েন্দা তথ্য সামনে এসেছে এবার।
যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এমাআই৬) এর বরাত দিয়ে একাধিক গোয়েন্দাসূত্র নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি হোটেলে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে বৈঠক করছেন।
সেই বৈঠকে খালেদা জিয়ার সাথে উপস্থিত ছিলেন তারেক রহমান ও লন্ডনে পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দিন। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে যোগ দেন আরেক পলাতক যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামানও। বৈঠকে ছিলেন লন্ডনে জামায়ত-ই-ইসলামীর কয়েকজন নেতা ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের পরিবারের সন্তান এবং পাকিস্থান দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা।
সেই বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় খালেদা জিয়া বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার জন্য আইএসআই’র সাথে সমযোতা করেন বলে গোয়েন্দা সূত্র জানায়।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৫ই জুলাই লন্ডন সফরে যান খালেদা জিয়া। যাত্রার প্রাক্কালে তার দল বিএনপি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায়, খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসা, তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছুদিন একান্তে সময় কাটানো এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতাদের সাথে আলোচনার জন্য এই সফর করছেন।
২০১৭’র জুলাইতে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের উদ্দেশ্য ছিল আইএসআই’র সাথে গোপন বৈঠক
এছাড়া একই বছর নভেম্বরে তিনি ভারত সফরেও যেতে চেয়েছিলেন। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সবুজ সঙ্কেত পেলে ভারত সফরের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করার কথা ছিল। ২০১৩ সাল থেকেই লন্ডন থেকে তারেক রহমানের সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেন ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সাথে। তবে এক্ষেত্রে বাধ সেধেছে খালেদা জিয়ার আইএসআই কানেকশন।
বিজেপির পক্ষ থেকে সাফ জানানো হয়েছে বাংলাদেশের উগ্র ইসলামপন্থী দল জামায়াত এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে ভারত সরকারে পক্ষ থেকে সমর্থনের বিষয়টি নিয়ে তারা অগ্রসর হতে পারে। কিন্তু লন্ডন সফরে আইএসআই’র সাথে খালেদা জিয়ার চাঞ্চল্যকর বৈঠকটির বিষয়টি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা জেনে ফেলায় বিজেপির সাথে সমঝোতা ফলপ্রসু হয়নি।
খালেদা জিয়ার সেই সফরে ২০শে জুলাই রাতের একটি বৈঠকের খবর জানতে পারে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস। সেখানে দুই পাকিস্থানি কূটনীতিকের (যাদেরকে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এজেন্ট বলে উল্লেখ করেছে) উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হন গোয়েন্দারা।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের সাথে খালেদা জিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত পুরনো। বিএনপি তাই চেষ্টা করেও ভারতের মন পাচ্ছে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া সবসময় আইএসআই’র আনুকূল্য এবং পরামর্শ মেনে চলেন। মনোনয়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আইএসআই’র লিস্ট ফলো করেন বলেও চাউর রয়েছে। ইতিপূর্বে বিএনপিকে নির্বাচনের জন্য বড় অঙ্কের আর্থিক সহযোগিতা করেছিল পাকিস্থান, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যদিও বিএনপি বরাবরই বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছে।
আরও পড়ুনঃ
শত্রুর চোখে বঙ্গবন্ধু –
শেখ মুজিব বাঙালিকে গোলামি থেকে মুক্তি দিয়েছে: টিক্কা খান
শেখ মুজিবের মতো মহামানব জীবনে আর দেখিনি: টিক্কা খান
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছে বিএনপি