একের পর এক জটিলতা যেন বিএনপির পিছুই ছাড়ছে না। অন্তঃকোন্দল, নেতৃত্বহীনতা, সিনিয়র নেতাদের বিদেশে পলায়ন সব মিলিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে দলটি। এরই মাঝে বিএনপি তে নতুন করে আরেক দফা ভাঙ্গনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নের ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে এখন চরম অরাজক অবস্থা বিরাজ করছে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয়ার অভিযোগ, জামাতের সঙ্গে সখ্যতা, এ বছরের শুরুতে পেট্রোল বোমা মেরে শতশত মানুষ পুড়িয়ে মারার কারণে জোটের অন্যান্য শরিকদলগুলো আর বিএনপির সঙ্গে থাকতে চাচ্ছে না।
সম্প্রতি বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা আবু হেনা , শহীদুল হক জামাল, জহির উদ্দিন স্বপন, মেজর হাফিজ, মেজর জেনারেল ( অব:) মাহাবুব,সাদেক হোসেন খোকা ও মওদূদ ( টেলিকনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন) , আমানুল্লাহ আমান, মফিকুল ইসলাম তৃপ্তি, শাখাওয়াত হোসেন বকুল, খাইরুল কবির খোকন, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, মারফ কামাল সোহেল গংরা সহ ৭৭/৭৮ জন সাবেক মন্ত্রী, সাবেক এম,পি আমলাদের গোপন মিটিং এর খবর ফাঁস হলে শরিক দল গুলোর মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়।
এদিকে বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জোটের বেশ কয়েকটি শরিকদল জোট থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এরই মধ্যে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) আলাদাভাবে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলেও গত ৭ বছরে অনুষ্ঠিত প্রায় সব স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। তবে ওইসব নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে কেবল জামায়াতের সঙ্গেই প্রার্থিতা ভাগাভাগি করেছে বিএনপি।
সূত্রমতে, নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল থাকায় জোটের অন্য শরিকরা এবার বিএনপির কাছ থেকে প্রার্থিতার ভাগ চেয়েছে। আর জামাত কে জোট থেকে বের করে দেয়ার দাবী জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেলে জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে যার যার মতো নির্বাচনে অংশ নেবে তারা এবং ২০ দলীয় জোট থেকে পুরোপুরি নিজেদেরকে সরিয়ে নিবে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাগপা, বাংলাদেশ ন্যাপসহ অন্তত আটটি দল এককভাবে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছে।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এলডিপির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বাংলাদেশ টাইমস কে বলেন, “আমরা নীতিগতভাবে জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি।” খালেদা জিয়া আর দেশে ফেরার কোন সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “এরকম একটি দলের সঙ্গে আমরা আর জোটবদ্ধভাবে থাকতে চাই না। এটা আমাদের দলের জন্য ক্ষতিকর। কর্মীদের মনবল ভেঙ্গে যাবে।” স্থানীয় নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখেন কিনা প্রশ্ন করা হলে অলি আহমেদ বলেন, “গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন(ঢাকা উত্তর-দক্ষিন, চট্টগ্রাম) এই সরকারের অধীনেই হয়েছে এবং আমার মতে ছোটখাটো দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বলার মত তেমন কিছুই হয়নি। নির্বাচন সুষ্ঠুই হয়েছে। আমি আশাবাদী স্থানীয় নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে।”
একইভাবে পঞ্চগড়ের স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, “জোটের কথা চিন্তা করার আগে আমাকে আমার দলের কথা চিন্তা করতে হবে। আমার দলের নেতাকর্মীরা স্থানীয় নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। আমিও সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি বিএনপি নির্বাচনে আসুক না আসুক আমরা নির্বাচনে যাব। দেশ-বিদেশে পালিয়ে থাকা দলের নেতাদের দিকে তাকিয়ে থাকলে তো আর আমার দল চলবে না।”
এ ছাড়া বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিও স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার ঘোষণার দিকে তাকিয়ে থাকা জোটের এই দলটি এরই মধ্যে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। কোনো কারণে যদি জোট নেতা নির্বাচন বয়কট করেন, তাহলে ২০ দলীয় জোট ভেঙ্গে দিয়ে এককভাবে নির্বাচনে যাবে দলটি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, “২০ দলীয় জোটে থাকা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত বেশিরভাগ দলই নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। এখন জামাত নির্বাচনে যেতে পারবে দেখে যদি বিএনপি চেয়ারপার্সন নির্বাচন বয়কট করে তাহলে সেই জোটে আমরা আর নেই।”
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মাহসচিব এম এম আমিনুর রহমান বাংলাদেশ টাইমস কে বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে যেতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে জোটের সিদ্ধান্ত যদি হয় নির্বাচন বয়কট, তাহলে আমার দল জোট বর্জন করবে এবং এককভাবে নির্বাচন করবে।”
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রার কয়েক দিনের মধ্যেই ২০ দলীয় জোটের অন্তত ৩টি শরিকদল ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহম্মদ নাসিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাসান মাহমুদের সঙ্গেও বৈঠকের চেষ্টা চালায় ওই তিনটি দলের শীর্ষ নেতারা।
কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসার সুযোগ পাননি ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা। তবে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ টাইমস কে বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো আমাদের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা আমাদের দলের চেয়ারপার্সনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। উনার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ কর সম্ভব হয়নি বলে এখনি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। আর জোট থেকে কেউ বেরিয়ে যাচ্ছে বা যেতে চাচ্ছে এমন খবর আমিও শুনেছি। তবে কে জোটে থাকবে আর কে থাকবে না এটা তাদের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।