বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা কর্মীদের মিথ্যে আশা দিয়ে সন্ত্রাসে লিপ্ত করে। অথচ করোনার মতো মহামারির মধ্যেও কর্মীদের পেছনে এক-টাকাও খরচ করেনি দলটি। কিন্তু এই সময়ে বিদেশের লবিস্টদের পিছে কোটি কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার জন্য। আমেরিকার লবিস্ট ফার্ম ‘একিন গাম্ফ’ এর সাথে মির্জা ফখরুলের চুক্তির কপি ফাঁস হওয়ার পর এসব তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়ে। ফলে বিএনপির অর্থ পাচার এবং দেশবিরোধী কার্যক্রমের বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে।
এরপর, বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে বাৎসরিক নিয়মানুসারে জমা দেওয়া আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ২০১১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বিএনপির মোট আয় ৩৪ কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৯ টাকা। এবং একই সময় দলটির মোট ব্যয়ের পরিমাণ ২৮ কোটি ৪২ লাখ ২ হাজার ৬৮২ টাকা। আয়ের খাত হিসেবে দেখানো হয়েছে অনুদান, নির্বাচনি ফরম বিক্রি, প্রাথমিক সদস্য ফি। এছাড়াও ব্যয়ের খাত হিসেবে দেখানো হয়েছে কর্মচারীদের বেতন-বোনাস, নির্বাচনি ব্যয়, জাতীয় সম্মেলন, সম্পদ ক্রয় ইত্যাদি। এমনকি করোনাকালীন সময়েও দলটির পক্ষ থেকে তাদের কর্মীদের জন্য এক পয়সার বরাদ্দও রাখা হয়নি। একারণে দলীয় বিভেদ ভুলে মানবিক কারণে সরকারের পক্ষ থেকেই সাহায্য করা হয়েছে অসহায় বিএনপি নেতাকর্মীদের।
এদিকে বিএনপির পুরো অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১০ বছরের আয় ব্যয়ের হিসেবে কোথাও লবিস্ট নিয়োগের পেছনে ব্যয়ের কথা উল্লেখ নেই। অথচ, সম্প্রতি লবিস্ট নিয়োগের তথ্য ফাঁসের পর, যা মির্জা ফখরুল স্বীকার করে নিয়েছেন প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে, সেই তথ্য অনুসারে- তিনটি আমেরিকান লবিস্ট ফার্মকে দেশবিরোধী প্রচারণার জন্য চুক্তি অনুসারে ৩১ কোটি ২৮ লাখ টাকা শোধ করেছে বিএনপি। সেই টাকা কীভাবে বিদেশে গেলো, কোন ফান্ড থেকে গেলো, তার কোনো হদিস নেই।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর মতে, যদি কোনো অডিট হিসাব না থাকে এই টাকার, তাহলে অবশ্যই টাকাগুলো হুন্ডি করে পাচার করা হয়েছে। টিআইবি আরও মনে করে, কোনো সরকার তার দেশের ব্রান্ডিংয়ের জন্য লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করতে পারে। সেটি সরকারি একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়। সারা বিশ্বে এটি স্বীকৃত। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল অন্য দেশে নিজ দেশের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করতে পারে না। এটি ফৌজদারি অপরাধ। দেশদ্রোহিতা। এজন্য তারা বিচারের মুখো দাঁড়াতে বাধ্য।
ফাঁস হয়ে যাওয়া বিদেশি ৩টি ফার্মের সঙ্গে বিএনপির গোপন চুক্তিগুলো থেকে দেখা যায়, ২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট ফার্ম ‘একিন গাম্প’ এর সাথে রাজনৈতিক দল পরিচয়ে (১৮ভিআইপি রোড, নয়াপল্টন) চুক্তিবদ্ধ হয় বিএনপি। দলীয় প্যাডে সেখানে স্বাক্ষর করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এই চুক্তির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ৩৪৯২। এতে দেখা যায়, ২০১৭ সালে বিএনপি লবিস্ট ফার্ম ‘একিন গাম্প’কে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেয়, ২০১৬ সালে দেয় ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা, ২০১৫ সালে দেয় ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশি টাকায় ৩ বছরে ২২ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করে বিএনপি।
এছাড়াও ২০১৮ সালের আগস্টে ‘রাস্কি পার্টনার্স’ এবং ‘ব্লু স্টার’ নামের দুটি মার্কিন লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হয় বিএনপি। যার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার যথাক্রমে ৬৫৮৬ এবং ৬৫৮৭। তাদের ফির পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সর্বমোট ৩টি লবিস্ট ফার্মকে দেশবিরোধী প্রচারণার জন্য মোট ৩১ কোটি ২৮ লাখ টাকা দেয় বিএনপি। অথচ এর একটি টাকার হিসাবও কোথাও নেই।
নির্বাচন কমিশন জমা দেওয়া অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এক দশকে দেশের মধ্যে যাবতীয় কার্যাবলী করতে যা খরচ করেছে বিএনপি, তারচেয়ে অনেক বেশি টাকা মাত্র ৩টি আমেরিকান লবিস্ট ফার্মকে দিয়েছে শুধু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য। যেই টাকার লেনদেনের কোনো বৈধ সূত্র নেই কোথাও। দেশবিরোধী প্রচারণার জন্য এই অবৈধ লেনদেন ও চুক্তি ফাঁস হওয়ার পর, তা অস্বীকার করার উপায় পাচ্ছে না বিএনপির হাই কমান্ড। তাই তারা অপযুক্তি দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।