ক্যান্সারে আক্রান্ত খালেদা, কে হতে যাচ্ছে বিএনপির নতুন কাণ্ডারি

0
7329

দীর্ঘদিন থেকেই ক্যান্সারে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সম্প্রতি টানা ২৪ দিন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালেও ইনটেনসিভ চিকিৎসা নেন তিনি। এরপর, ৭ নভেম্বর, হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পরপরই বিএনপির নেতাদের মধ্যে শুরু হয় নানা রকম গুঞ্জন। খালেদা জিয়ার অবর্তমানে দল কীভাবে চলবে তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত আসতে শুরু করেছে। কারণ তারেক রহমান দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, তাই তার পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এমনকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও সে গ্রহণযোগ্য নয়। তাহলে কে হবেন বিএনপির নতুন কাণ্ডারি, এটি নিয়েই কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এমনকি বিএনপির এই দুঃসময়ে জামায়াতের কর্মকাণ্ডেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানই এখনো দলের একটি বড় অংশকে নিয়ন্ত্রণ করছে। দল পরিচালনার বিষয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দূরত্বও আছে তারেকের। এই কারণে বিএনপির সিনিয়র নেতারাও দুই ভাগে বিভক্ত। তবে ঢাকার নেতারা এতোদিন খালেদা জিয়ার প্রতি সন্মান থেকে নীরবতা পালন করলেও, এবার প্রকাশ্যে মতবিরোধ শুরু হয়েছে তাদের। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে, ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে আমান উল্লাহ আমান ও মির্জা আব্বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। দুই গ্রুপের স্থানীয় কর্মীদের মধ্যেও বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। 

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার প্রতি অনুগত একটি অংশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তবে তারেক রহমানের বিরোধিতার কারণে তাকে দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত হিসেবেই থাকতে হয়েছে। অন্যদিকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে দলের একটি অংশ তারেক রহমানের নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছে। এই অংশটি চাচ্ছে চাচ্ছে খালেদার জিয়ার কিছু হলে, ফখরুলকে সরিয়ে রিজভীকে মহাসচিব বানাতে। আর এখন খালেদা জিয়া বেঁচে থাকতেই তার মুখ দিয়ে তারেক রহমানকে বিএনপির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করতে, তাহলে দেশজুড়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে তা গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করছেন নেতারা।

এদিকে মির্জা ফখরুল গ্রুপের কয়েকজন নেতা বলেন, তারেক রহমানের শীর্ষ পদে আসার ব্যাপারটা রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে মেলানো যাচ্ছেে না। কারণ, তারেক একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাই সে নির্বাচন করতে পারবে না। এমনকি ভোটের জন্য দেশে ফেরার ব্যাপারেও আগ্রহ নেই তার। লন্ডনে বসে বাংলাদেশের দল পরিচালনা করলে সেই দলের পক্ষে ভালো কিছু করা সম্ভব না। কর্মীরা শীর্ষ পদে একজন রাজপথের নেতা চায়। নেতা রাজপথে না থাকলে কোনো দলই টেকে না। তাই দলের মহাসচিবকে অথবা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য কোনো সিনিয়র নেতাকে দলের চেয়ারম্যান করার প্রস্তাবনা আছে অনেকের পক্ষ থেকে।

[ক্যান্সারে আক্রান্ত খালেদা, কে হতে যাচ্ছে বিএনপির নতুন কাণ্ডারি]

তবে রুহুল কবির রিজভী গ্রুপের একজন কেন্দ্রীয় সম্পাদক বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে ফখরুলের গ্রহণযোগ্যতা কম। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সফল আন্দোলন করতে পারেননি। তাকে শীর্ষ পদে আনা হলে বিএনপির তৃণমূলের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। খালেদা জিয়ার অবর্তমানে তারেক রহমানকেই শীর্ষ পদে আনার প্রক্রিয়া চলছে। কোনো কারণে তা করা সম্ভব না হলে, তারেক রহমানের প্রতিনিধি হিসেবে সাময়িকভাবে রিজভীকেই শীর্ষ পদে আনা হতে পারে। তারেক রহমানের আস্থাভাজন তিনি।

এবিষয়ে বিএনপির প্রেস উইংয়ের একজন সাবেক সদস্য জানান, দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে রিজভীর সম্পর্ক স্বাভাবিক না। সিনিয়ররা তাকে দলের শীর্ষ পদে মানবে না। রিজভীকে চেয়ারম্যান করা হলে বিএনপি ভেঙে যাবে।

এদিকে সম্প্রতি আমান উল্লাহ আমানকে ঢাকার রাজনীতির দায়িত্ব দিয়েছে তারেক রহমান। তবে মির্জা আব্বাস এটি খুব ভালোভাবে নেননি। ঢাকার রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মির্জা আব্বাসকে আস্তে আস্তে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই এমনটি করা হয়েছে বলে মনে করছেন তার সমর্থকরা। একারণে খালেদা জিয়ার ক্যান্সারের খবর শোনার পরই সক্রিয় হয়ে উঠেছে আব্বাসপন্থী নেতাকর্মীরা। যেকোনোভাবে আমানপন্থীদের ঠেকিয়ে রাজধানীতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাচ্ছেন তারা। দীর্ঘদিনের ঘাঁটি ছাড়ার ব্যাপারে অপত্তি আছে মির্জা আব্বাসের নিজেরও।

দলের ভেতরের অস্থিরতা চলাকালীন অবস্থার মধ্যে প্রকাশ্যে জামায়াতকে ভর্ৎসনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, জামায়াতের কারণেই আজ বিএনপির এই অবস্থা। বিএনপির রাজনীতি নিয়ে ফাজলামো করছে জামায়াত। এভাবে চলতে থাকলে খালেদা জিয়ার অবর্তমানে বিএনপি শিগগিরই জামায়াতের ভেতরে হারিয়ে যাবে। বিএনপিকে বাঁচাতে হবে, আগে জামায়াতের হাত থেকে বাঁচতে হবে। এরপর চিন্তা করে যদি একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে যদি শীর্ষ পদে বসানো যায়, তাহলে হয়তো দলকে রক্ষা করা সম্ভব।

তবে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, খালেদা জিয়ার অবর্তমানে তারা রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে নির্ঝঞ্ঝাট জীবন কাটাবেন। তবে যারা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তারা হয়তো নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নিজ নিজ জায়গা থেকে যেকোনো একটি সুবিধাজনক অবস্থান নেবেন। অনেকে দলের সঙ্গে থাকতেও পারেন। আবার অনেকে দল বদলের জন্য ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।

আরো পড়ুনঃ 

comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here