বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম নেতা ড. কামাল হোসেনের জামাই ডেভিড বার্গম্যান। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের অর্থায়নে ‘নেত্র নিউজ’ নামে একটি অনলাইন পত্রিকা খুলেছে সে। অথচ সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা কিছু না জানা বা না মানার কারণে বাংলাদেশের দুটি পত্রিকা থেকে চাকরি হারিয়েছে সে একসময়। এমনকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদকে নিয়ে কটুক্তি করায় আদালত তাকে শাস্তিও দিয়েছেন। এরপর বাংলাদেশ ছাড়ে সে। তবে শারীরিকভাবে বাংলাদেশ ছাড়লেও, বাংলাদেশের পিছু ছাড়েনি সে। তার কারণ, তার মতো একজন সাদা চামড়ার জাত্যাভিমানি ব্রিটিশ নাগরিককে বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার আদালতে শাস্তি পেতে হয়েছে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে চাকরি হারাতে হয়েছে, এটি মেনে নিতে পারেনি সে। এছাড়া তার শ্বশুর ড. কামাল হোসেনও যেকোনো উপায়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে, শেষ বয়সে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগ করতে চান। জামাই-শ্বশুরের আত্মীয়তাকে ছাড়িয়ে যৌথ স্বার্থের হিসেব মেলাতে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে তারা একই সরলরেখায় মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
তবে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াত ও আইএসআই-এর অর্থায়নে পরিচালিত বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় যাওয়ায় স্বপ্ন ভেঙে গেছে ড. কামাল হোসেনের। জনগণ তাকে পরিত্যাগ করেছে। কিন্তু বিকল্প উপায়ে সরকারের পতন ঘটাতে মরিয়া হয়ে আছেন তিনি। আর তার জামাই ও ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানকে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে বিতর্কিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে মোটিভেট করতে এবং বিদেশি ফান্ড আনার ক্ষেত্রে ডেভিড বার্গম্যানের সাদা চামড়া এবং ব্রিটিশ নাগরিকত্বকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করছেন ড. কামাল। আর বিএনপি-জামায়াত ও আইএসআই-এর টাকায় দিন দিন ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করেছে কিছুদিন আগেও বেকার থাকা ডেভিড বার্গম্যান।
সাবেক ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে পরিচিত এই ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে একটি হলো বর্তমান বাংলাদেশ। এই দেশের বিতর্কিত রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের মেয়েকে বিয়ে করে ডেভিড বার্গম্যান। তার লক্ষ্য ছিল, নিজের ব্রিটিশ প্রভাব খাটিয়ে শ্বশুরকে সামনে রেখে তৃতীয় বিশ্বের এই দেশের রাজনীতিতে প্রবেশ করবে সে। এক্ষেত্রে সে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের কট্টর মৌলবাদী গ্রুপটাকে হাত করার চেষ্টা করে। কিন্তু এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কটূক্তি করায় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করা অপচেষ্টার দায়ে আদালতে দণ্ডিত হতে হয় তাকে। এদেশের আমজনতার কাছেও ধিকৃত হয় সে। ফলে রাষ্ট্রক্ষমতা উপভোগ করার স্বপ্ন ভেঙে যায় তার। এরপর এদেশের সরকারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ডেভিড বার্গম্যান।
বাংলাদেশ ত্যাগ করার পর, এদেশ থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত এবং পলাতক আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করে একটি চক্র হড়ে তোলে সে। সেই ধারাবাহিকতায় তার সঙ্গে যুক্ত হয় তাসনিম খলিল। দুজন মিলে গড়ে তোলে ‘নেত্র নিউজ’ নামে বাংলাদেশ বিরোধী একটি আন্ডারগ্রাউন্ড প্রচারযন্ত্র। মূলত বার্গম্যানের মাধ্যমে আমেরিকার গোয়েন্দাদের সঙ্গেও সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে তাসনিম খলিল। এরপর তাদের অর্থায়নে তথাকথিত এই অনলাইন চালাতে শুরু করে তারা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণাই তাদের মূল লক্ষ্য। বার্গম্যান ও তাসনিম খলিল, দুজনের কারো সাংবাদিকতা বিষয়ে লেখাপড়া নেই এবং মূল ধারার গণমাধ্যমে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতাও নেই। তারপরেও আমেরিকার বেসরকারি সংস্থা এনইডি নিয়মিত মোটা অঙ্কের ডলার খরচ করে যাচ্ছে তাদের তথাকথিত অনলাইন নিউজ পোর্টালের পেছনে। শুধু তাই নয়, মার্কিন গোয়েন্দাদের অর্থায়নে পরিচালিত এই ওয়েব পোর্টালটির প্রধান সম্পাদক হয়েছেন তাসনিম খলিল এবং এর ইংরেজি বিভাগের সম্পাদক হিসেবে আছেন ডেভিড বার্গম্যান।
মার্কিন বেসরকারি সংস্থা এনইডি সম্পর্কে আপনারা এতোদিনে হয়তো জেনে গেছেন। এই সংস্থার মাধ্যমে আমেরিকার গোয়েন্দারা বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যম খোলার ছদ্মবেশে সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এক্ষেত্রে তারা সেই দেশের বিভিন্ন ব্যক্তিকেই মোটা অঙ্কের অর্থ দেয় এবং তাদের সামনে রেখেই নিজেদের মিশন পরিচালনা করে। ১৯৯০ সালে নিকারাগুয়াতে পরিচালিত মার্কিন গোয়েন্দাদের তৎপরতার পর, এই পদ্ধতিতে মার্কিন গোয়েন্দাদের সবচেয়ে সফল অপারেশন ছিল ইউক্রেনের সরকার উৎখাতে। ২০১৩-১৪ সালে ইউক্রেনের ইউরো-ময়দান (কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কয়ার) গণবিপ্লবের ছদ্মবেশে সরকার উৎখাত করে তারা। ঠিক একই স্টাইলে কিছুদিন আগে থেকে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউবে উস্কানি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে শুরু করে এই চক্রটি।
শুধু আন্ডারগ্রাউন্ড নিউজপেপারে গুজব ছড়িয়েই থেমে নেই ষড়যন্ত্রকারীরা। ইউটিউবার কনোক সারোয়ার, চাকরিচ্যুত কর্নেল শহীদ উদ্দীন খান, মেজর দেলোয়ার, শহীদুল আলম, মাহমুদুর রহমানরাও ইউক্রেনের ইউরো-ময়দান স্টাইলের প্রচারণা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অনলাইনজুড়ে সরকারবিরোদী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। যেকোনোভাবে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সফল হলে, তারা বিএনপি-জামায়াত ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীদের হাতে বাংলাদেশকে তুলে দিয়ে, এই দেশকে আফগানিস্তান স্টাইলে একটি জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।