দেখুন তো নামগুলো চিনতে পারেন কিনা!

0
98

ড. কামাল হোসেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আ স ম আবদুর রব, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আকবর আলি খান, সুলতানা কামাল, মাহমুদুর রহমান মান্না, আসিফ নজরুল, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. ইফতেখারুজ্জামান। নিশ্চয়ই তাদের নাম জানেন। তারা বাংলাদেশের স্বঘোষিত জাতির বিবেক। বুদ্ধিজীবী না বলে তাদের বুদ্ধি ব্যবসায়ী বলাটাই সমীচীন মনে করি।

কামাল সাহেব তো আড়াই বছর আগেও দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু দিনশেষে দেখা গেলো আসলে কামাল সাহেব বিএনপি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের ঐক্যের ডাক দিয়েছেনে এবং নাম দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই ঐক্যফ্রন্টে তিনি কিন্তু আবার প্রাইম মিনিস্টেরিয়াল ক্যান্ডিডেট নন। এমনকি তিনি সংসদ সদস্য পদেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নি। মানে তিনি আম খাবেন, কিন্তু গাছে উঠবেন না। নির্বাচন শেষে দেখা গেলো আওয়ামী লীগ বিরোধী সবাইকে নির্বাচনের নামে গাছে উঠিয়ে কামাল সাহেব গাছের নিচে থেকে ভেগেছেন। এতো বড় একটি রাজনৈতিক জোট করেও কামাল সাহেবদের ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছিলো মোটে ৭টি আসন৷

সংসদে এই ৭ ভাইদের একমাত্র চম্পা বোন হলেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। টকশোতে আওয়ামী বিরোধী আইকন হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি ডান পাড়ায় ভালো নাম কামিয়েছেন। কথায় কথায় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি আস্থাহীনতার বয়ান দেন, কিন্তু দিনশেষে দেখা গেলো আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর কাছে তিনি পূর্বাচলের ১০ কাঠা প্লট চেয়েছেন চিঠি দিয়ে। এই হলো টকশোবাজ বুদ্ধি ব্যবসায়ীদের ঈমানের জোর।

ফিরে আসি ড. কামাল হোসেনের গল্পে। এই কামাল সাহেব একসময় বঙ্গবন্ধুর সহচর ছিলেন, শেখ হাসিনার ছায়াতলেও রাজনীতি করেছেন। কিন্তু সবাই তো আর ঈমান ঠিক রাখতে পারে না, কামাল সাহেবও পারেন নি। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের আন্তর্জাতিক লবিস্ট ডেভিড বার্গম্যানের কাছে। এই বার্গম্যানরা বাংলাদেশ বিরোধী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। বার্গম্যানের কলম কথা বলে স্বাধীনতা বিরোধীদের স্বরে।

আমার প্রশ্ন হলো, বৈশ্বিক মহামারীতে গত ১ বছরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিও যে প্যানডমিক পরিস্থিতির মুখোমুখি, যেখানে একজন ভিক্ষুকও মানবতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন তার সামর্থ্য অনুযায়ী, সেখানে জাতির বিবেক সেজে বসে থাকা কামাল সাহেবরা কোথায়?

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ‘হাই ক্লাস’ এলিটরাই বা কোথায়? ক’দিন আগে খবরে দেখলাম, ইউনূস সাহেবের জন্মদিনে তথাকথিত ‘সামাজিক ব্যবসা দিবসে’ অংশ নিতে একেকজনকে এক থেকে দেড় হাজার ডলার রেজিষ্ট্রেশন ফি দিতে হয়। এই অনুষ্ঠানগুলো আবার অনুষ্ঠিত হয় প্যারিস, মিউনিখ, ব্যাঙ্গালোর, ব্যাংকক ও মেক্সিকো সিটির মতো শহরে। একেকটি জন্মদিনে উনার ইউনূস সেন্টারের আয় প্রায় ২৪০ কোটি টাকা। ইউনূস সাহেবের বাজার দর বুঝতেই পারছেন! যিনি ক্ষুদ্র ঋণের মতো অর্থনৈতিক ব্যাপারে শান্তির নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন ‘মানবিকতার’ সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে। গত ১ বছরের প্যানডমিক পরিস্থিতিতে উনাদের মানবতা জাগে না? বাংলাদেশের মানুষ নাহয় উনাদের পছন্দ না, অন্যান্য দেশের কোথাও কোনো ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়েছে ইউনূস সেন্টার এমনটাও কখনো শুনতে পাইনি।

মাহমুদুর রহমান মান্না সাহেব এর ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একবার মজা করে বলেছিলেন, মান্না খালি করে কান্না। আ স ম আবদুর রব সম্পর্কে একই বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, অসময়ে নীরব সুসময়ে সরব তিনি হলেন আ স ম রব। বাস্তবেও আসলে তাই। মহামারীর এই খারাপ সময়ে উনারা নীরবে নিভৃতে ধ্যানমগ্ন আছেন। আবার নির্বাচন আসলে উনাদের ধ্যান ভাঙবে। মান্না সাহেব তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের লাশ চাইবেন সরকার পতন ঘটাতে। এইসব তো জানা গল্প।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেব কি নাটকটাই না করলেন গণস্বাস্থ্যের তথাকথিত করোনা শনাক্তকরণ কিট নিয়ে! কয়েক মাস দেশের মানুষের সিম্প্যাথি কামাই করে শেষমেশ নিজেরাই স্বীকার করলেন, তাদের কিট আসলে করোনা শনাক্ত করে না। সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উপস্থাপন করলেন জাফরুল্লাহ সাহেব, তাই কিটের অনুমোদন পেতে তিনি পাড়ি জমালেন মার্কিন মুল্লুকে। পরে দেখা গেলো, এই কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়ও বোধ করে নাই যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সংস্থা, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-সিডিসি। দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়ার পর গত বছরের মাঝামাঝি ভাইরাস শনাক্তে সক্ষম র‍্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট উদ্ভাবনের ঘোষণা দেয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এই কিট অনুমোদনের জন্য ব্যাপক চাপ দেয়া হয় সরকারকে। এর অংশ হিসেবে বলা হয়েছিল, সরকার যদি কিটের অনুমোদন না দেয়, তাহলে সিডিসিকে সেই কিট দিয়ে দেয়া হবে। ওই বছরের ১৭ মে সিডিসির কাছে কিছু নমুনা দেয়া হয় বলে দাবি করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। পরে জানানো হয়, প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে আরও ৮০০ কিট চেয়েছে। তবে সিডিসির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. মাইকেল ফ্রেইডম্যান বলেন, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট সিডিসি কখনো পরীক্ষাই করেনি।’ বোঝেন অবস্থা! দেশের মানুষ কি করে আস্থা রাখবে তাদের উপর? সামান্য একটা কিট নিয়েও রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি, ফলাফল হলো ঘোড়ার ডিম্ব।

সুলতানা কামাল, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. ইফতেখারুজ্জামান, আকবর আলি খান সাহেবরাও নীরবে নিভৃতে ধ্যানমগ্ন থাকেন যতক্ষণ না আওয়ামী লীগের কোনো ফাঁকফোকর খুঁজে না পান। মিডিয়ার সামনে স্ট্যান্ডবাজিতে উনারা পাকা খেলোয়াড় হলেও দেশের সংকট দেখলে আস্তে করে গ্যালারিতে বিশ্রামে চলে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল সাহেব তো আরও এককাঠি সরেশ। উনি আবার ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদের মেয়ের জামাইও।

এই আসিফ নজরুল সাহেব একসময় শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিরুদ্ধে গঠিত গণআদালতে যুক্ত ছিলেন, আরও স্পষ্ট করে বললে উনি আসলে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর স্পাই ছিলেন সেই গণআদালতে। ফলাফল যা হলো, অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত দলিল-নথিপত্র চুরি করে জামায়াতে ইসলামীর হাতে দিয়েছিলেন তিনি। আসিফ নজরুল সাহেব দিনের বেলা ইসলামি বিপ্লবে ইন্ধন দেন, রাতের বেলা আবার মদের আসরে চিয়ার্স করেন। আন্দালিভ রহমান পার্থ সাহেবের কথাও খুব মনে পড়ে আসিফ নজরুল সাহেবের কথা উঠলে। মদের গ্লাস হাতে ইসলাম রক্ষাকারী জুলফিকার আলী ভুট্টো সাহেবের যোগ্য উত্তরসূরি এই দুজন।

কথা অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছে। লেখাও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এমন লিজেন্ডারি ক্যারেক্টারগুলো নিয়ে আসলে অল্প কথায় শেষ করা সম্ভব না। কথা হচ্ছে, দেশের এই ভীষণ প্রয়োজনের সময় এই বুদ্ধি ব্যবসায়ীরা সব কোথায়?

লেখক- হামজা রহমান অন্তর, কলামিস্ট ও ছাত্রনেতা।

comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here