রাজনৈতিক অধিকারের দোহাই দিয়ে বিএনপি-জামাত তথা ২০ দলীয় জোট দেশের নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গিদের সারাদেশে সন্ত্রাস নাশকতা, ও পেট্রোলবোমায় দেশের সাধারণ মানুষ পুড়িয়ে মারারা যে মানবতাবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে তাতে, ২০ দলীয় জোট বিশেষ করে বিএনপির প্রতি দিনে দিনে ক্ষোভ বাড়ছে। তারা ৫ জানুয়ারি থেকে এই ৪৪ দিনে বাংলাদেশ ও বিশ্বের মুসলমানদের হজ্বের পরে বিশাল ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিশ্ব এসতেমা, হিন্দুদের সরস্বতি পূজা, ঈদ ই মিলাদুন্নবী সর্বোপরি দেশের ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষাথীকে জিম্মি করে অবরোধের পাশাপাশি এ পর্যন্ত লাগাতার তিন সপ্তাহের হরতাল পালন করে জনমানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। তাই কেউ আর এখন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস আশ্রিত নাশকতা ও মানুষ পুড়িয়ে মারায় কর্মসূচি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এমনকি বিএনপির নেতাকর্মীরাও আন্দোলনের মাঠ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। সারাদেশের জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক হয়ে ওঠছে।
এতদিন বিএনপি-জামাত যেসব বিদেশি রাষ্ট্রের সহানুভূতি সমর্থনের আশায় ছিল সেসব বিদেশি দেশ ও দাতাগোষ্ঠীও মনে করছে বিএনপি একটি ‘ত্রাসের পরিবেশ’ সৃষ্টি করেছে। এবং বিশেষ বিশেষ জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্দন ও পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে এ ধরনের কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি। তাই এতদিন বিদেশীদের প্রতি ভরসা করে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে গেলেও এখন কোন রাষ্ট্রই তাদের পাশে নেই। অপরপক্ষে বিদেশী দেশগুলো মনে করছে বর্তমান সরকার অতীতের চেয়ে এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। বিরোধী দল দেশে একটি ‘ত্রাসের পরিবেশ’ সৃষ্টি করছে বলেও মনে করেন তারা। আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমা, জ্বালাও-পোড়াও, নিরীহ মানুষ হত্যা, জনসম্পৃক্ততা না থাকা ইত্যাদির কারণে বিএনপির পক্ষে অবস্থান নিতে পারছেন না বিদেশীরা। এছাড়া এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সংলাপের যৌক্তিতা আছে কি-না সেটা ভেবে দেখছে জাতিসংঘ।
বিএনপি-জামায়াত জোট প্রায় দেড় মাস ধরে টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী চালিয়ে গেলেও কোন একটি বিদেশী রাষ্ট্রই এই কর্মসূচীকে সমর্থন দেয়নি। প্রায় সব দেশের কূটনীতিকরা বিএনপিকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। তাদের অভিমত, বিএনপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচী চালিয়ে যেতে হবে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাক গলাবে না। বার্নিকাট বলেন ‘এই দেশের রাজনৈতিক সমস্যা এখানকার রাজনীতিবিদ ও জনগণই সমাধান করবে। তিনি শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশে এসেছেন।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,চীন জাপান, ভারত সোভিয়েট রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ওআইসি আগেই তাদের অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছে।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ভারত সরকার মনে করে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে শেখ হাসিনার সরকার আত্মবিশ্বাসী। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন দিল্লীতে পেশ করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধে গাড়িতে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও বোমাবাজিতে ‘ত্রাসের পরিবেশ’ সৃষ্টির বিষয়টিও স্বীকার করেছেন পঙ্কজ শরন। এক মাসেরও বেশি সময়ের অবরোধে নাশকতায় এরই মধ্যে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের অধিকাংশই পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। যেসব জেলায় বেশি সহিংস ঘটনা ঘটেছে সেগুলো চিহ্নিত করেছে ভারত। সেগুলোর মধ্যে ফেনী, চট্টগ্রাম, যশোর, বরিশাল, রংপুর, মাগুরা ও ঢাকা রয়েছে। ভারতীয় হাইকমিশনারের প্রতিবেদনে বলা হয়, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে এর চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে হাসিনার সরকার। সহিংসতা দমনে বাংলাদেশ সরকার কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে এবং তা কাজে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং এরই মধ্যে তারা বেশ সফলতাও পেয়েছে। ভারতের হাইকমিশনার প্রতিবেদনে জানান, পেট্রোলবোমা মেরে অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যায় সাধারণ জনগণ বিক্ষোভকারীদের বিপক্ষে চলে গেছে এবং তা সহিংসতা দমনে জনসাধারণের সমর্থন পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করছে।
সুতরাং বিএনপির জন্য এখন এক কঠিন সময়। ঘরে-বাইরে বিএনপি-জামাত যেভাবে একঘরে হয়ে যাচ্ছে তাতে জিয়ার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি চরম এক অস্তিত্ব বিলীনের পথে।