ইসলামি সংগঠন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের ডাকে আর কোন আন্দোলনে নামনে না বলে জানিয়েছে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। মাদ্রাসা হুজুরদের একের পর এক বালাৎকার- এর খবর, আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের মাঠে নামিয়ে সিনিয়র নেতাদের আরাম আয়েশের জীবনের ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
দেশের অন্তত ২৩ টি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছে। এই মাদ্রাসাগুলোর প্রাঙ্গণে হেফাজতের নেতা এবং মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কওমি মাদ্রাসার সিনিয়র ছাত্ররা জড়ো হয়েছিলেন মাদ্রাসাগুলোর ভবিষ্যৎ এবং মাদ্রাসা বন্ধ হলে করণীয় নিয়ে তারা আলোচনা করতে। এই আলোচনায় তারা সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন যে, তাদের মাদ্রাসাগুলো যেন বন্ধ না করে দেওয়া হয় এবং এই সমাবেশগুলোতে তারা বলেছে যে, হেফাজতের আন্দোলনে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আর অংশগ্রহণ করবে না। এইসব সমাবেশগুলোতে হেফাজতের কঠোর সমালোচনা করা হয় এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে হেফাজতের নেতারা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যবহার করেন এরকম অভিমতও ব্যক্ত করা হয়।
ঢাকা এবং কেরানীগঞ্জের ১০টি মাদ্রাসায় এরকম মাদ্রাসা ছাত্রদের কর্মীসভার কথা বলা হয়। কর্মীসভা না বলে তারা এটাকে করণীয় নিয়ে আলোচনা সভা বলছেন। একজন মাদ্রাসার ছাত্র বলেছে যে, মাদ্রাসা হুজুররা ছোট ছোত বাচ্চাদের উপর যে অত্যাচার চালায়, ধর্ষনের ঘটনা, সেই সাথে আবাসিক ছাত্রদের কোনরকম খাও্যা দাও্যা দিয়ে নিজেদের আরাম আয়েশের জীবনের কথা উল্লেখ করেন, তিনি বলেন এইগুলা আর মেনে নেয়া যায় না। একজন সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের এই সব অপকর্মের বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে।
নেতৃবৃন্দ মাদ্রাসার সিনিয়ার ছাত্ররা এই বৈঠকের আলোচনা করেন এবং এই বৈঠকে তারা হেফাজতের সাম্প্রতিক আন্দোলন এবং অতীতের আন্দোলনের তীব্র সমালোচনা করেন। মাদ্রাসার ছাত্ররা বলেন যে মাদ্রাসার এতিম বাচ্চাদেরকে ব্যবহার করে হেফাজতের নেতারা দেশে অশান্তির সৃষ্টি করেছে এবং এখানে বদনাম হচ্ছে মাদ্রাসাগুলোর। আর এই কারনেই এই ১০টি মাদ্রাসায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, তারা ভবিষ্যতে হেফাজতের ডাকা কোনো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে না। শুধু ঢাকায় নয় চট্টগ্রামেও একাধিক মাদ্রাসায় একইরকমের বৈঠক হয়েছে।
এরকম বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে বরিশাল এবং কুমিল্লাতেও। একটি সূত্র বলছে যে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ঘটনার পর এখন নিজেরা একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে এবং তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব, নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে তারা একটি ঐক্যমতের জায়গা তৈরি করেছে। অতীতে দেখা গেছে হেফাজতের মাদ্রাসার শিক্ষকরা যা বলতেন সেটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই ছিলো মাদ্রাসার ছাত্রদের একমাত্র কাজ। আর মাদ্রাসার শিক্ষকদেরকে নিয়ন্ত্রন করা শুরু করে হেফাজত।
বেশ কিছুদিন ধরে সারাদেশে মাদ্রাসা ছাত্রদের যৌন্য নির্যাতন এবং ২০১৩ সালের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে এরকমভাবে লেলিয়ে দেয়া ও এ বছর ২৬ এবং ২৭ মার্চে একই রকম ঘটনা ঘটানো নিয়ে মাদ্রাসাগুলোতে সমালোচনা চলছে। অনেক মাদ্রাসার ছাত্র নির্যাতিত হচ্ছে, অনেকে মারা যাচ্ছে। কিন্তু এরপরেও হেফাজতের নেতারা তাদের কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না। এ কারণেই মাদ্রাসার বড় ছাত্ররা মিলিত হয়ে এরকম একটি অবস্থান গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছে।