২০০৯ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় যে নির্মম ‘বিডিআর হত্যাযজ্ঞ’ সংঘটিত হয় তা নিয়ে গত এক দশক ধরে চলেছে বিচিত্র প্রচার এবং অপপ্রচার। বিডিআর হত্যাকান্ড সম্পর্কে উইকিলিকসের প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণে তারা বলেছে, পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ‘পিলখানা হত্যাকান্ড’ ঘটে। এর মূল লক্ষ্য ছিল- তৎকালীন নতুন আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত ও জঙ্গি বাহিনীর উত্থান এবং বিডিআর বাহিনী ধ্বংস করে দেয়া।
বিএনপি জামায়াত সরকারের সহায়তায় যেভাবে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ বাংলাদেশে বিস্তার করছিল তাতে সামগ্রিকভাবে সহযোগিতা করেছিল বিএনপি এবং জামায়াত ইসলামের বেশ কিছু সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যার মূল নেতৃত্বে ছিলেন তারেক জিয়া। ওই সময়ে তারেক জিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রায় ২০০-রও বেশি ইমেইল আদান-প্রদানের রেকর্ড বিশ্লেষণে এসব তথ্য প্রকাশ করে উইকিলিকস।
সরকার পতনের লক্ষ্যে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সময়টিকে বেছে নেয়া হয় যা ছিল শেখ হাসিনার নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর সম্পূর্ণ নাজুক সময়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিডিআর সৈনিকদের দাবি-দাওয়ার আড়ালে মূল প্লানটি বাস্তবায়নের জন্য মোট ৬০ কোটি রুপি বরাদ্দ করে পাকিস্তান। ২৫ তারিখ সকালে বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু পিলখানায় ঢুকতে সহায়তা করে পাকিস্তানের ১৫ জন শুটারকে। পুরো পরিকল্পনা ও কলকাঠি ছিল তারেক জিয়ার হাতে। ঘটনার দিন সকাল থেকে বাংলাদেশে বিএনপি নেতাদের মালিকানাধীন মিডিয়া গুলো মনগড়া তথ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিব্রত করতে থাকে। বিদ্রোহের দিন পাকিস্তান বিমানবাহিনী বাংলাদেশ সরকার উৎখাতে পূর্ণ সহায়তা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল।
বিদ্রোহ শুরু হবার আগেই খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় তারেক। যা পরবর্তীতে কল লিস্টের মাধ্যমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন। সকাল বেলা খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাসা ছেড়ে প্রথমে পাকিস্তান হাইকমিশনে যান এবং পরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। যিনি দুপুর ১টার আগে ঘুম থেকে ওঠেন না, তিনি কেন সকাল সাড়ে সাতটায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেলেন?
পিলখানা হত্যাযজ্ঞের বিচার শুরু হলে বিএনপির সিনিয়র নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ প্রায় ২৫ জনের মতো আইনজীবী খুনিদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে, তাঁরা এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে নীতি ও আদর্শগতভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলো।
হত্যাযজ্ঞে যেসব জোয়ান সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল তাদের মধ্যে ডিএডি তৌহিদ, সিপাহী মাঈন, সুবেদার মেজর গোফরান মল্লিকসহ অন্যান্য অভিযুক্তরা সবাই জামাত-বিএনপির জোট সরকারের আমলে বিডিআরে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিল। হত্যাযজ্ঞের পর টাঙ্গাইল থেকে যে ২২ অপরাধী বিডিআর জোয়ানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের নিয়োগ হয়েছিল বিএনপির উপমন্ত্রী সালামের সরাসরি সুপারিশে। এদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে একটি ‘কিলিং স্কোয়াড’ বিডিআর বাহিনীতে গোপনে রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয়েছিল এই ভাবনা থেকে যে, যদি জোট সরকার ক্ষমতায় আসতে না পারে তাহলে পরবর্তী সরকারকে উৎখাত করে পুনরায় যাতে তাদের ক্ষমতায় আসার রাস্তা সুগম হয়।
ঘটনার দুদিন পর গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে জনসমক্ষে এসে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন ভাষায় খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। তিনি হয়তো চেয়েছিলেন যাতে সেনাবাহিনী বিডিআর ও গণভবনে হামলা চালায়। এমন ঘটলে বিডিআরে হতাহতের সংখ্যা ২০ হাজার বা তারও বেশি হয়ে যেতো।
একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের জানিয়ে রাখি, মেজর জিয়ার শাসনামলে ১৯৭৭-১৯৮১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ২১টি সামরিক অভ্যুত্থানে ২০০০-এর বেশি সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্য নিহত হলেও সেই অভ্যুত্থানের কোন দৃশ্যমান বিচার হয়নি। এমনকি অনেক মামলার নথিও গায়েব করে ফেলা হয়েছে। সামরিক সদস্যদের হত্যা করা বিএনপির অনেক পুরোনো অভ্যাস। যে ষড়যন্ত্রের শুরু মেজর জিয়ার হাত ধরে যা এখনো তারেক জিয়া চলমান রেখেছে।