করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়া

0
4015

করোনা মহামারির শুরুতে ইউরোপ-আমেরিকার শক্তিশালী দেশগুলোর অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, মৃত্যুর মিছিলে যোগ দেয় লাখ লাখ মানুষ। নিজেদের দেশের বিপর্যয় দেখে, তৃতীয় বিশ্বের ব্যাপারে আগাম নেতিবাচক ধারণা প্রকাশ করে তাদের গণমাধ্যমগুলো। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে লাখ লাখ প্রাণহানি, দুর্ভিক্ষ, অর্থনীতি ধসে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে বলে জানায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। দ্য ইকোনোমিস্ট, টেলিগ্রাফ, আল জাজিরার বিভিন্ন প্রতিবেদনে নিয়মিতই বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা হতে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে তেমন কিছুই হয়নি। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর সতর্ক অবস্থানে চলে যায় বাংলাদেশ। বিশেষ সরকারি ছুটি ঘোষণা এবং স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মহামারি এড়ানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। এমনকি কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে খাবার এ স্বাস্থ্যসেবা।

তাই বলে বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নেতিবাচক প্রচারণা থেমে থাকেনি। তারা বছরজুড়ে নিয়মিতই বাংলাদেশ সম্পর্কে অপপ্রচার চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রতিবারই তাদের পূর্বধারণা ভুল প্রমাণিত করে পরিস্থিতি জয় করেছে বাংলাদেশ। এমনকি এই মহামারির মধ্যে যেখানে ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতি ধসে গেছে, সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি এর তেমন কোনো প্রভাবই পড়েনি। উল্টো সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো পর্যন্ত এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ যে ক্রমেই একটা শক্তিশালী ও সাবলম্বী রাষ্ট্র হয়ে উঠছে, তা মেনে নেওয়া কঠিন পশ্চিমা বিশ্বের জন্য।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় উন্নত রাষ্ট্রগুলোর ব্যর্থতার বিপরীতে বাংলাদেশের সাফল্য চমকে দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে। একই সঙ্গে তাদের ঈর্ষার কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছি আমরা।

ইকোনোমিস্ট-টেলিগ্রাফ-জাজিরার এজেন্ডা সেট করে কারা?

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, চীনের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপরই দ্রুতই তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, রূপ নেয় মহামারিতে। বিশ্বের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে শুরুতেই সতর্কতামূলক অবস্থানে যায় বাংলাদেশ। এরপর, ২০২০ সালের ৮ মার্চ, দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। জনসচেতনতা সৃষ্টি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য মানুষকে সচেতন করতে গণহারে প্রচারণা চালায় সরকার। আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত করা হয়। ঘরে ঘরে পাঠানো হয় সহায়তা সামগ্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বড় ক্ষতির আশঙ্কা সামলে সচল হয়ে ওঠে দেশের অর্থনীতির চাকা। তবে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্ত বহাল থাকে।

কিন্তু মহামারি শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের একটি অংশের বিরূপ প্রচারণার শিকার হয় বাংলাদেশ। ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু, অর্থনীতি ধসের পড়ার মতো খবরই ছিল এসব গণমাধ্যমের বিষয়বস্তু। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা। ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল তাদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে ২০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এই মহামারি মোকাবিলা করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করে তারা। এর আগে, একই বছরের ২৩ মার্চ আরও একটি বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রচার করে জাজিরা। কোনো সূত্র ও তথ্য ছাড়াই জাজিরা দাবি করে- বাংলাদেশের মানুষ ভয়ে আছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই।

এসময় ইউরোপের স্বনামধন্য পত্রিকা দ্য ইকোনোমিস্টও একপেশে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ নিয়ে। ৬ জুন ২০২০ ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় সাড়ে সাত লাখ করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছে। কিন্তু তারা কোনো তথ্য বা জরিপের ভিত্তিতে এই সংবাদ প্রকাশ করেনি। ছোট্ট একটি নমুনা থেকে তারা আনুমানিক এই প্রতিবেদন করেছে। তবে তাদের এই তথ্য ভুল ছিল। এই প্রতিবেদনে আইসিডিডিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক ডা. জন ক্লেমেন্টস-এর বক্তব্য ব্যবহার করে তারা। পরবর্তীতে ডা. জন ক্লেমেন্টস জানান, তার কথা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচারে পিছিয়ে ছিল না ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফও। ১১ জুনের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে আখ্যা দেয় পত্রিকাটি। আরেকটি প্রতিবেদনে টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ অর্থনীতির অবস্থান নিয়েও সংশয় প্রকাশ করে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, মহামারির মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়া দেশের তালিকায় বেশ ওপরে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এছাড়াও দেশে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই সরকারের উদ্যোগের কারণে দেশে চলে এসেছে ভ্যাকসিন। রাজধানীসহ পুরো দেশ আবারো ফিরে পেয়েছে আগের রূপ।

বাংলাদেশ নিয়ে ইতিবাচক ছিল না জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেও। ১০ জুনের এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, করোনাভাইরাস মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে বাংলাদেশে। করোনার কারণে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে এবং অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। আর ঘুরেফিরে এসব প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, ইউরোপপ্রবাসী দুই বাংলাদেশি পিনাকী ভট্টাচার্য ও তাসনিম খলিলের বক্তব্যকেই বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অথচ এই ব্যক্তিরা বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই চিহ্নিত। সূত্রবিহীন একপেশে সাংবাদিকতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশ নিয়ে এসব নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেগুলোর উৎস হলো বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন অপরাধের কারণে দণ্ডিত ও পলাতক দেশবিরোধী চক্রের সদস্যরা। এই চক্রটি বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের একটি অংশকে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার করে আসছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের উপস্থাপনা এবং প্রকৃত বাস্তবতা

কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট চাঙ্গা রয়েছে বলে জানিয়েছে ইকোনমিক ফোরাম। তারা আরো জানিয়েছে, করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিস্ময় হিসেবে দেখছে বিশ্ব। এছাড়াও বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পূর্বাভাস ছিল সব সময় ইতিবাচক। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ইতিবাচক পূর্বাভাস দেয় তারা। করোনা নিয়ন্ত্রণেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো শেষ পর্যন্ত ভুল ও মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও বলছে- চলতি বছরও বড় প্রবৃদ্ধি অজর্নকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি হবে বাংলাদেশ।

এদিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যখন সারা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ, তখনো কিন্তু নেত্র নিউজের কর্নধার তাসনিম খলিলের চোখে তা পড়েনি। উল্টো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করে যাওয়া ডেভিড বার্গম্যানের সঙ্গে জোট বেধে বাংলাদেশ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এই পত্রিকা। মূলত বার্গম্যানের শ্বশুর ড. কামাল হোসেন বিএনপি-জামায়াত জোটের সমন্বয়ক এবং নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ার পর তারা আন্তর্জাতিকভাবে সরকারবিরোধী প্রচারণা চাালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে সরকারকে বিপদে ফেলার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করছে তারা।

দ্য ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ: সংবাদ নাকি সাজানো এজেন্ডা

এশিয়া মহাদেশ, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করাটা আসলে পশ্চিমাদের কাছে এক ধরনের বিনোদন, আমাদের নিয়ে খেলার চেষ্টা করে তারা। হ্যাঁ, এটাই বাস্তবতা। বিনোদন বা চিত্তাকর্ষক সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে যেমন কিছু ভালো রেজ্যুলশনের ছবি এবং মনের মাধুরী মেশানো ভাষার ব্যবহারকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়, তেমনি ইউরোপের অনেক পত্রিকার পাতায়ও আমাদের সেভাবে উপস্থাপন করা হয়। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশের অংশ হিসেবে এখনো বিভিন্ন সময় আমাদের হেয় করার চেষ্টা করে তারা। কিছু দিন পরপরই এই কাজগুলো করে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক গণমাধ্যম। ইউরোপ-আমেরিকার যেকোনো বিষয়ে এই পত্রিকাগুলো কিন্তু খুব নিরপেক্ষ সংবাদই প্রকাশ করে, সেজন্য বিম।বজুড়ে তাদের খ্যাতিও রয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া বা আফ্রিকার দেশগুলোর ব্যাপারে তাদের এজেন্ডা ভিন্ন, তারা এখানে সংবাদের নাম ব্যবহার করে স্বেচ্ছাচারী মতামত প্রকাশ।

বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও আফ্রিকার অনেক দেশ একসময় ব্রিটেন ও ফ্রান্সের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে তারা ভৌগলিকভাবে এসব দেশ থেকে পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয়। কিন্তু বিভিন্নভাবে তারা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-কূটনৈতিক আধিপাত্য ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মূলত এ কারণেই আমাদের দেশের মতো আরো কিছু দেশ নিয়ে মাঝে মধ্যেই খেলার চেষ্টা করে তারা। এই খেলার একটা অংশ হলো উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশ করা। তাই বাংলাদেশ নিয়ে তারা যখন সংবাদ প্রকাশ করে, তখন কোনো নিরপেক্ষতার ধার ধারে না। উল্টো আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে তারা। এক্ষেত্র তাদের সহযোগী ও সূত্র হিসেবে হিসেবে কাজ করে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী একটা চক্র।

কিছুদিন পরপরই বাংলাদেশ নিয়ে ইকোনোমিস্টের মতো পত্রিকা এই অপসাংবাদিকতা করে কেনো? আসলে তাদের এজেন্ডা কী?

সম্প্রতি ইকোনোমিস্ট বাংলাদেশকে নিয়ে একটি নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা বলার চেষ্টা করেছে যে, বাংলাদেশ সরকার সেনাবাহিনীর পেছনে অনেক অর্থ খরচ করে। তারা বোঝাতে চাচ্ছে যে, এই টাকা সেনাসদস্যদের পেছনে খরচ না করলেও চলতো। মূলত সেনাবাহিনীর সদস্যরা যেসব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন, সেসবকেই নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়েছে এখানে। তাদের মূল টার্গেট এখানে, প্রধানমন্ত্রী। ইকোনোমিস্ট বলতে চায়, শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে সুবিধা দিচ্ছে এবং তাদের সাহায্যে টিকে আছেন। কিন্তু বাস্তবতা আসলে কী, বাংলাদেশ সরকার সব সরকারি কর্মচারীদের বেতন স্কেল আগের তুলনায় দ্বিগুণ করেছে। এটা একটি নিয়মিত ঘটনা। বড় কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকলে প্রতি এক যুগ পরপরই এটা নিয়মিতভাবে হয়ে থাকে। আর এই সুবিধা পায় দেশের সব সরকারি কর্মচারী। অথচ, ইকোনোমিস্ট টার্গেট করলো শুধু সেনাবাহিনীকে। এটা কী সাংবাদিকতা? নাকি কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা?

বাংলাদেশেরবিরোধী অপ্রচারের কালো অধ্যায়

ইকোনোমিস্ট কিন্তু এবারই নতুন নয়, এর আগেও তারা এ ধরনের কাজ করেছে। বাংলাদেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়, তখনও তারা এটি নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেকরকম বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। পরবর্তীতে ডখন কুখ্যাত জামায়াত নেতা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিচার শুরু হয়, তখন তিন হাজার শব্দের বেশি খরচ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইকোনোমিস্ট। সাধারণত এতো বড় সংবাদ কোনো পত্রিকা খুব একটা প্রকাশ করে না। এক্ষেত্রে বিশেষ ইন্ধন ও স্বার্থের প্রশ্ন রয়েছে। একে প্রভাবিত করেছেন বিএনপি-জামায়াতে কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার নেওয়া আন্তর্জাতিক লবিস্টরা। মজার ব্যাপার হলো, বিচার শুরুর সময়েই ইকোনোমিস্ট তাদের সংবাদে বলেছে যে- সম্ভবত তাকে দোষী প্রমাণ করে (সাঈদী) ফাঁসি দেওয়া হবে। এটা কী সংবাদের ভাষা? নাকি ‘পিআর লাঙ্গুয়েজ’? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে কিছু মতাদর্শ নির্মাণের পক্ষে কাজ করেছে ইকোনোমিস্ট।

এমনকি এই বিচার শুরু হওয়ার পর তারা একটি জঘন্য সংবাদ প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়েছে: বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করাটাও একটা অপরাধ। অথচ তারা যখন জার্মান কর্তৃক ইহুদী গণহত্যা- হলোকাস্ট, প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে, তখন তারা সবসময় গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং বিচারের পক্ষে সোচ্চার হয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। কিন্তু বাংলাদেশের ত্রিশ লাখ মানুষেকে হত্যার ঘটনায় তাদের ভূমিকা ঠিক উল্টো। এমনকি তারা তাদের সংবাদে এই সংখ্যাকে তিন লাখ বলেও উপস্থাপন করেছে।

গত এক বছরে, করোনার মধ্যে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নীতি নিয়েও উদ্দেশ্যমূলক নেতিবাচক প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা একটি সংবাদ প্রকাশ করে, যার হেডলাইন দেওয়া হয়: ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি, চীন সংযোগ গুরুত্ব পাচ্ছে’। অথচ বাংলাদেশের সঙ্গে উভয় দেশেরই সুসম্পর্ক বিদ্যমান। এটি নষ্ট করার জন্য অপপ্রয়াস চালিয়েছিলো ইকোনোমিস্ট, কিন্তু লাভ হয়নি।

পশ্চিমারা চায়, কলোনিভুক্ত সাবেক রাষ্ট্রগুলো সারাজীবন তাদের তাঁবেদারি করবে, তাদের পায়ের কাছে বসে থাকবে। বাংলাদেশে পদ্মাসেতু নির্মাণের অর্থায়ন থামিয়ে দিয়ে তারা তাদের ক্ষমতা দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য উৎসাহে নিজেদের টাকায় বিশ্বের অন্যতম একটি বড় সেতু নির্মাণ করে ফেলেছে বাংলাদেশ। এটা ছিল তাদের প্রতি চপেটাঘাত। এরপর সফলভাবে করোনা মহামারি মোকাবিলা, এমনকি শুরুতেই কোটি কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ নিশ্চিত করা। আবার অনেক ধনী দেশকে টপকে, বাংলাদেশের মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, তাও সহ্য হচ্ছে না তাদের। মূলত বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর এই অবস্থা মেনে নিতে পারছে না অনেকে। তাই তারা এই নতুন বাংলাদেশের কারিগর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ক্রমাগত ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সহায়তা করছে এই দেশেরই স্বাধীনতা ও উন্নয়নবিরোধী একটি চক্র। আর এসব যড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে কিছু গণমাধ্যমকে।

পশ্চিমাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘মিডিয়া ক্যু’র স্বপ্নে বিভোর আল-জাজিরা

আমরা ইতোমধ্যে জানি যে, কিছুদিন আগেই কাতারের রাজপরিবারের প্রচারযন্ত্র আল-জাজিরায় একটি ডকু-ড্রামা প্রকাশ করা হয়েছে বাংলাদেশ নিয়ে। যার হেড লাইনে ব্যবহার করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নাম। কিন্তু পুরো এক ঘণ্টার এই নাটকে কোথাও প্রধানমন্ত্রীর কোনো সম্পৃক্ততা দেখা যায়নি। শুধু এক নিকৃষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। বাস্তব অর্থে, তারা সংবাদের ছদ্মবেশে একটি রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে। এর আগেও তারা একাধিকবার এই কাজ করেছে। এ বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকারে দেশের শীর্ষ স্থানীয় অনলাইন বিডিনিউজের প্রধানসম্পদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেছেন, আল জাজিরা অনেকক্ষেত্রেই অনেক ভালো সংবাদ করে। তবে দক্ষিণ এশিয়া বা বাংলাদেশ অংশটা যারা দেখেন, তাদের সেই লোকদের হয়তো এই অঞ্চল সম্পর্কে ধারণা কম, অথবা সাংবাদিক হওয়ার ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিদের যোগ্যতার অভাব রয়েছে।

এছাড়াও আল জাজিরার এসব উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে অর্থায়নের একটা সম্পর্ক আছে। এর অর্থায়ন করে কাতারের সরকার, যাদের সঙ্গে সন্ত্রাসী সংগঠন ব্রাদারহুডের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আর এই ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের জামায়াতের। উগ্রবাদী জামায়াত-বিএনপির এই চক্রকে সুবিধা দিতে এবং বাংলাদেশের সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য এই কাজগুলো করে জাজিরা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে এই মিডিয়া, তেমনি এই মানবিক সরকারকে বিপদে ফেলে বাংলাদেশকে একটা জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে তারা।

comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here