বাংলাদেশি ব্লগার-অ্যাকটিভিস্ট আসাদুজ্জামান নূর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কলকাতায় বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি তার আক্রমনাত্মক বক্তব্য কয়েকগুনে বেড়েছে যার ফলে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেফতারের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর ফলে ভারত সরকার পড়েছে দোলাচালের মধ্যে কারন এর আগে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফা’র অরবিন্দ রাজখোয়াড়ের মত গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে ভারত সরকারকে সহযোগিতা করেছে। আর ভারতে ব্লগার আসাদুজ্জামান নুরের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করছেন মোদি সরকারের একজন ক্ষমতাশালী মন্ত্রী।
মোদী সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর জোরে গত সপ্তাহে নুরকে গ্রেফতার ও বিচারের সম্মুখীন করতে বাংলাদেশের একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকলে ব্লগার নুরকে খুজে বের করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চেষ্টা ব্যর্থ হতো না।
বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ্য কুটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বাংলাদেশ সরকারকে উদ্দ্যেশ্য করে তার (আসাদুজ্জামান নূর) সমালোচনাগুলো অস্বাভাবিক। এই কারনে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে যে সে ভারতে কারো সমর্থন পাচ্ছে ঠিকই, আদতে কলকাঠি নাড়ছে পাকিস্তান।“
একই ধরনের অভিযোগ শেখ হাসিনার একজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধেও আনা হয়েছে যার প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ভারতের সাথে দুটি বড় ব্যবসায়িক চুক্তি করেছে। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মিত্র ও উত্তর-পুর্বের দুই কংগ্রেস সাংসদ ‘পিএম কেয়ারস ফান্ড’ নিয়ে সাম্প্রতিক এক সংসদীয় বিতর্কে বিজেপি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য এই দুইটি চুক্তি এমন লোকের হাতে দেওয়া হয়েছে যারা ‘পাকিস্তানের খুবই কাছের”।
বাংলাদেশ গবেষক ও ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা ‘মিডনাইট ম্যাসাকার’ বইয়ের লেখক সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত বলেন “বিজেপি-আরএসএস নূরকে নতুন তসলিমা নাসরীন হিসেবে দেখছে যে কিনা বাংলাদেশের দুর্বল অসাম্প্রদায়িক চেতনার কড়া সমালোচক। কিন্তু বিজেপি-আরএসএস যেভাবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছে এবং নুরের মতো আওয়ামী লীগ বিরোধীদের আশ্রয় দিচ্ছে তাতে করে এখনকার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে জটিল করে তুলছে।“
ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর নুরের নামে এবছর ১৪ জুলাই নতুন অভিযোগ দায়ের করা করা হয় যার জেরেই মূলত বাংলাদেশের পুলিশ তাকে খুঁজছে। অভিযোগে বলা হয় নুরের প্রকাশিত এই ভিডিওতে ‘গুজব’ এবং ‘ইসলাম-বিদ্বেষ’ ছড়ানো হচ্ছে।
আলোচ্য এই ভিডিওতে নূর একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুর পক্ষে কথা বলেছেন যিনি চট্টগ্রামে বৌদ্ধ মন্দির ভাঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে আসছেন। অথচ সেই বৌদ্ধ ভিক্ষু দখল করেছে একরের পর একর সংরক্ষিত বন। এছাড়াও তিনি একটি শিক্ষাবিষয়ক প্ল্যাটফর্মের পক্ষে কথা বলেছেন যারা বাংলাদেশে সমকামের পক্ষে কথা বলছে। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে সমকাম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নুরকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ এর অধীনে অভিযুক্ত যা বাংলাদেশে ধর্মীয় অবমাননা বিরোধী আইন হিসেবেও কাজ করে।