ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। দুই সিটির ১২৯ ওয়ার্ডের মধ্যে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী রয়েছেন ৬৫ জন। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থীই দিতে পারেনি বিএনপি। বিদ্রোহী প্রার্থীর জের ধরেই গত ১২ জানুয়ারি মিরপুরে উত্তর সিটির বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের গণসংযোগস্থলে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় দুই একজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত থাকলেও গণসংযোগকালে স্থানীয় ওয়ার্ডের নেতা কর্মীরা উপস্থিত থাকছেন না। এমন কি কিছু ওয়ার্ডে চার/পাঁচজন নেতা–কর্মী প্রার্থী হয়েছেন এবং কর্মীরা জানেনই না তাদের কাউন্সিল প্রার্থী কে। দলটির মেয়র প্রার্থীদের সাথে সকালে ট্রাকে করে ঢাকার আসপাশের এলাকা থেকে লোক এনে গনসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। উত্তর সিটির মেয়র প্রার্থী তাবিথের গণসংযোগে সরেজমিনে গিয়ে মিলেছে সত্যতা। সেখানে বিএনপির কর্মীর বেশ ধরে গনসংযোগে মিশে গিয়ে জানা গেছে অনেকের পরিচয়, এরা বেশিরভাগই এসেছেন সাভারের নবীনগর থেকে। দিনে ৫০০ টাকা, দুই বেলা খাওয়া এবং বিনা খরচে যাতায়াত এই চুক্তি করা হয় তাদের সাথে। তারা প্রায় ৪০ জন একই এলাকা থেকে এসেছেন বিএনপির গণসংযোগে।
অপরদিকে দক্ষিণ সিটির বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাকের গনসংযোগে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থেকে এসেছেন প্রায় ৫৫ জন, সবাই স্থানীয় বিএনপির নেতা কর্মী। পেট চুক্তি খাওয়া এবং দিনে ৬০০ টাকার বিনিময়ে ট্রাকে করে এসেছেন ঢাকায়, থাকবেন তিনদিন। এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতার সাথে আলাপ হলে তিনি জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীর ফলে ওয়ার্ড গুলোতে গণসংযোগকালে স্থানীয় নেতা কর্মীদের পাশে পাওয়া যাচ্ছে না তাই বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে লোক এনে জনসমাগম দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আসলে ভোটের জন্য এখানে কেউ আসছে না, সবাই তার নেতার ডাকে এখানে এসেছে। যাতে জেলা সম্মেলন হলে ‘একটিভ’ নেতা হিসবে তার নাম বিবেচ্য হয় এই আশাতেই লোকের যোগান দিচ্ছে ঢাকার বাইরের নেতারা।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতার সূত্রমতে, ঢাকা উত্তর সিটির ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন আবু তৈয়ব। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এখানে প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রদল নেতা জামাল হোসেন। আবু তৈয়ব বলেন, জামাল হোসেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কথাও মানছেন না। তাঁর কারণে দলীয় সমর্থকদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী পল্লবী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। এখানকার আরেক প্রার্থী পল্লবী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমেদ। ঠিক এভাবেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন ৩৪ জন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির ধানমন্ডি থানার সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক উদ্দিন ভূঁইয়া কাউন্সিলর পদে দলের সমর্থন পেয়েছেন। এখানে প্রার্থী হয়েছেন দলের ওয়ার্ড কমিটির সহসভাপতি আবু নাছেরও। একই ভাবে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি সাব্বির আহমেদ। প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন বিএনপির ওয়ারী থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকও। ঠিক এভাবেই দক্ষিণ সিটিতে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টিতে প্রার্থী ৩১ জন। তাঁরা সবাই নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যাপারে দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সাথে আলাপ করলে তারা কোন সমাধানের পথ বলতে পারেননি। একজন আর একজনের দোষ দিচ্ছেন অথবা এড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে সূত্রমতে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে এখনো করণীয় নির্ধারণ করেনি বিএনপি।