একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে বিএনপির মধ্যে চরম অসন্তোষ ও অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। জানা গেছে, মাত্র তিন’শ আসনের বিপরীতে সাড়ে ৫ হাজার মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে তিন হাজার প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়ে আট শতাধিক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পিছনে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে।
গুঞ্জন উঠেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিপরীতে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও একটি আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে কোটি কোটি আত্মসাৎ করেছে বিএনপি। মূলত রিজভী আহমেদ, শামসুজ্জামান দুদুদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সিন্ডিকেট অর্থ আত্মসাৎ করে আখের গোছাতেই জেনেশুনে এক আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থীদের দিয়েছেন এবং নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঘোরতর প্রতারণা করেছে। মনোনয়ন বঞ্চিত বিএনপি নেতা, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও নারায়ণগঞ্জের মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বরাতে তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।
মনোনয়ন বাণিজ্যের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, কপালটা দেখুন আমার! কী করিনি বিএনপির জন্য! বিএনপির জন্য কাজ করতে গিয়ে কতগুলো মামলা খেয়েছি। লন্ডন সফরের সময় তারেক স্যার আমাকে কথা দিয়েছিলেন যে এবারের নির্বাচনে একটি আসন দিবেন। সারাজীবন কম পয়সা ইনকাম করিনি আমি। শেষ জীবনে এমপি হওয়ার বড় শখ ছিলো। কিন্তু মানুষের সব ইচ্ছা সম্ভবত পূরণ হয় না। যে দলের জন্য এতটা সময় দিলাম, সেই দলের গুটি কয়েক নেতার ষড়যন্ত্রের কারণে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলো না। খবর পেয়েছি, রিজভী আহমেদ, শামসুজ্জামান দুদুরা মিলে সিন্ডিকেট করে মনোনয়ন বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা ইনকাম করেছেন। এক আসনে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়ার কোন অর্থ হয় না। প্রত্যেকজনের কাছ থেকে সাধ্যমত টাকা নিয়ে পকেট ভরেছে এই সিন্ডিকেট। জেনেশুনে বিএনপির সহজ-সরল নেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করলো রিজভীরা। তাই তো বলি, কাজ-কর্ম ছেড়ে দিয়ে দিন-রাত পার্টি অফিসে পড়ে থাকেন কি কারণে! এখন বুঝতে পারছি, নির্বাচনকালীন বাণিজ্যের জন্য রিজভীরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে অফিসকে কেন আস্তানা বানিয়েছে।
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি সাবেক সংসদ সদস্য। এলাকায় আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। অথচ আমাকে বাইপাস করে রিজভী-দুদু চক্র জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আমি বুঝতে পারছি না, এক আসনে দুজনকে মনোনয়ন দেয়ার অর্থ কী? খবর পেয়েছি শাহ আলম ও মামুন মাহমুদ ১ কোটি করে মোট দু’কোটি টাকা রিজভী-দুদু চক্রকে দিয়েছে। দলের নিবেদিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এমন ঘৃণ্য প্রতারণা করার কোন মানে হয় না। আমি খবর পেয়েছি, সারা দেশের এমন অনেক আসনে দুজন-তিনজন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রত্যেককে মনোনয়ন দেয়ার ওয়াদা করেছে দুষ্টু চক্রটি। কষ্ট হয় ভাবতে যে, এমন প্রতারকরা বিএনপিকে নেতৃত্ব দেন। বিএনপির অধঃপতনের জন্য রিজভী, দুদুর মতো নষ্ট চরিত্রের মানুষরা সরাসরি দায়ী। আমরা যারা অর্থ দিয়ে রিজভী-দুদু চক্রের খপ্পরে পড়ে অর্থ হারিয়েছি তারা একাট্টা হয়ে তারেক রহমানকে চিঠি দিয়ে প্রতারণার বিষয়টি জানাবো।