বর্তমানে রাজনীতি সম্পর্কে যারা সচেতন বা নিয়মিত পত্র-পত্রিকা, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখেন তারা সহজেই একটা বিষয় অনুমান করতে পারেন যে, রাজনীতিতে নতুন খেলা শুরু হয়েছে। যোগ হয়েছে নতুন নতুন খেলোয়াড়। যদিও এই খেলা বা খেলোয়াড় কেউই নতুন না। বলা যায় পুরাতন পথ্য নতুন মোড়কে বাজারজাত করা হয়েছে মাত্র।
ইদানিং জাতীয় ঐক্য নিয়ে খুবই কথা হচ্ছে। এই জাতীয় ঐক্যের নেতৃত্ব মোটামুটি সবাই নিজ নিজ দল থেকে বিতাড়িত বা নিজ দলে সুবিধা করতে না পারাদের দলের মানুষ। জাতীয় ঐক্যের মূলে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রবীণ দুই রাজনীতিবিদ। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং অন্যজন বিজ্ঞ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। এদের সাথে যোগ হয়েছেন নাগরিক ঐক্য নামে নাম সর্বস্ব রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের মালিক মাহামুদুর রহমান মান্না ও জাসদ ( জেএসডি) এর আ স ম আব্দুর রব।
সবাই মিলে জাতির সামনে জাতীয় ঐক্যের কথা বললেও কার সাথে কার ঐক্য সেটা স্পষ্ট করে বলেননি। তবে ঢাক গুড় গুড় করেও বেশি লাভ হয়নি। কারণ সত্য খুব বেশি চাপাও থাকে না। এই কারণে জাতীয় ঐক্যেরে ব্যাপারেও বেশ কিছু সত্য প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে। এই ঐক্য মূলত বর্তমান সরকার বিরোধীদের নিয়েই ঐক্য। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ বিরোধী সব শিবিরকে একত্রিত করার নামই দিয়েছেন ড. কামাল হোনেন-বি চৌধুরীদের নেতৃত্ব জাতীয় ঐক্য। নির্বাচনের আগে আগে দেশের প্রবীণ দুই রাজনীতিবিদ সরকার বিরোধী ঐক্যের কথা বলায় দীর্ঘদিন গৃহবন্দীত্ব থেকে রাজপথে রাজনীতি নিয়ে আসার আশার আলো দেখতে পায় বিএনপি। এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় জেল খাটছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হয়েছেন তারেক রহমান কিন্তু তিনিও বিভিন্ন মামলা এবং সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় পলাতক জীবন যাপন করছেন। আর তারেক রহমানকে বিএনপির মধ্যেই যারা মাঠের রাজনীতি করেন বা একটু উদারবাদী বলে পরিচিত এবং সিনিয়র তারা কেউই পছন্দ করেন না। কারণ তারা মনে করেন বিএনপির আজকের এই দুর্দশার মূলে রয়েছেন তারেক রহমান। আর ছেলের শত অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে সেই অন্যায়কে বাড়তে দিয়েছেন মা খালেদা জিয়া। জিয়া পরিবারের জীবিত এই দুই সদস্যদের কারণেই বিএনপির এই ভঙ্গুর অবস্থা। কিন্তু দলটির অনেক নেতা-কর্মী সক্রিয় থাকলেও শুধুমাত্র মা-ছেলের ভুল রাজনীতির কারণে তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সবাই তাদের ভুল রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে চায়।
এই মুহূর্তে ড.কামাল-বি চৌধুরী মিলে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলে বিএনপিও তাতে সামিল হতে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু জেলের মধ্যে বেগম জিয়া ও লন্ডনে পলাতক থাকা তারেক রহমান এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করলেও খুব বেশি লাভ হয়নি। আবার এই বিষয়ে প্রকাশ্যে তারেক রহমান কথাও বলতে পারছেন না। কারণ তখন নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসবে।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে যে, ড. কামালের নেতৃত্বে বৃহত্তর ঐক্যের জন্য বিএনপির রাজি হওয়ার পিছনে রয়েছে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের রাহুগ্রাস থেকে বিএনপিকে মুক্ত করা। এটা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা চাইলেও তৃণমূল একমত না। কিন্তু বিএনপির নেতারা বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে এই ঐক্য করছেন বলে তৃণমূলকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ড.কামাল হোসেন-বি চৌধুরীদের নেতৃত্ব মানতে রাজি বিএনপি। আসন ভাগাভাগিতেও থাকবে সমতা। যদিও ভোটের মাঠে কামাল-বি চৌধুরীদের কোন প্রভাব নেই। বিএনপির ভোট এবং সরকার বিরোধী ভোট ব্যাংকই তাদের ভরসা। তার পরেও জাতীয় ঐক্যের নেতারা চান সামনের নির্বাচনে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে। এই ক্ষেত্রে তারা বিএনপির কাছ থেকে ১৫০ আসন নিবে এবং বিএনপিকে ১৫০ আসন দিবে।
সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করলে ড. কামাল হবেন প্রধানমন্ত্রী এবং বি চৌধুরী হবেন রাষ্ট্রপতি। মন্ত্রীসভাতেও সমতা রাখার কথা রয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে বিএনপিকে একটু ছাড় দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে বিএনপির সব ধরনের সমন্বয় করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপিকে সামিল করতে কাজে লাগিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এবং আরো বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাক।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় জিয়া পরিবারের কাউকে না রাখারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধুকেও এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা হয়নি। আর এর মাধ্যমেই শুধু বিএনপি থেকে নয় মূলত রাজনীতি থেকেই জিয়া পরিবারকে মাইনাস করা হচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সামনের দিনে দেখার বিষয় হলো জিয়া পরিবারের বাইরে যেয়ে রাজনীতিতে বিএনপি কতটা ভালো করে।