পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম হত্যা ও পুরান ঢাকায় হোসেনী দালানে বোমা হামলার ঘটনার যোগসূত্র আছে বলে মনে করছে পুলিশ। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সম্ভাব্য ফাঁসি ঠেকাতে জামায়াত-শিবির এমন ঘটনা আরো ঘটাতে পারে বলে তথ্য দিয়েছে শিবিরের সাথি মাসুদ রানা ওরফে সুমন। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিবি) জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ব্যাপক নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে জামাত-শিবির। সম্প্রতি বগুড়ার আদমদীঘিতে স্থানীয় এক জামাত নেতার বাড়িতে হয় নাশকতার এক ‘মহাপরিকল্পনা’। দুর্গাপূজা চলার সময় ঢাকার যেকোনো একটি মন্দিরে হামলা বা তাজিয়া মিছিলে হামলাসহ নভেম্বরের মধ্যে বড় নাশকতা ঘটাতে চাইছে তারা। এরই অংশ হিসেবে ঢাকার আশপাশে শিবিরের মেসগুলোতে ক্যাডাররা অবস্থান নিচ্ছে, অস্ত্র ও বোমা মজুদ করছে। সে অনুযায়ী সহযোগী মাসুদ রানাকে নিয়ে আদমদীঘির সাবেক শিবির সভাপতি এনামুল হক কামাল বগুড়া থেকে বাসে করে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গাবতলীর পর্বতা সিনেমা হলের সামনে এসে নামে। তাদের গন্তব্য ছিল কামরাঙ্গীরচরে শিবির পরিচালিত মেস। কিন্তু পুলিশের চেকপোস্টে ধরা পড়ে যায় রানা। আর এএসআই ইব্রাহিম মোল্লাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় এনামুল। এতে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা কিছুটা হলেও হোঁচট খায়। এরই মধ্যে দুর্গাপূজা শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় বেছে নেওয়া হয় তাজিয়া মিছিলের সমাবেশকে। ওই কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে এমন আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসছে।
এএসআই হত্যা মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা বলেন, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইউনুস আলীর বাড়িতে রাজধানীতে নাশকতার মূল পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তী সময়ে গাজীপুরের শালনায় চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়। নভেম্বরের মধ্যে রাজধানীতে বড় ধরনের ‘ঘটনা’ ঘটাতে চাইছে তারা। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের প্রথম টার্গেট ছিল দুর্গাপূজা চলার সময় ঢাকার যেকোনো একটি মন্দিরে হামলা চালানোর।
এ ব্যাপারে পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মাসুদ রানার তথ্য অনুযায়ী কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি বোমা উদ্ধার করা হয়। ওই বোমার সঙ্গে তাজিয়া মিছিলে বিস্ফোরিত বোমার মিল পাওয়া গেছে। দুটি ঘটনাতেই জামায়াত-শিবিরচক্রের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে জামায়াত-শিবির। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এরই মধ্যে জামায়াত-শিবিরচক্র জড়ো করছে ক্যাডার, বিস্ফোরক ও অস্ত্র।
মাসুদ রানা রিমান্ডে : এএসআই ইব্রাহিম হত্যা মামলার আসামি শিবিরের সাথি মাসুদ রানাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে ডিবি পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ২৮ জনকে ঢাকায় এনে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে আদালতে পাঠায় ডিবি। মামলার তদারক কর্মকর্তা ডিবি উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, মাসুদ রানা জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছে। তার তথ্যের ভিত্তিতেই কামরাঙ্গীরচর, গাজীপুর ও বগুড়ার কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয় বোমা ও নথিপত্র।
মাসুদ রানা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, শুধু পুলিশ নয়, আরো বড় ধরনের হামলা চালাতে জামায়াত-শিবির প্রস্তুত। কামরাঙ্গীরচর, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশে জামায়াত-শিবিরের কয়েক শ মেস ও ঘাঁটি রয়েছে। সূত্র জানায়, এএসআই ইব্রাহিমকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়া এনামুল আদমদীঘি শিবিরের সাবেক সভাপতি এবং শিবিরের সক্রিয় ক্যাডার। ঘটনার পর এনামুল ও তার স্বজনরা পালিয়েছে।