ফখরুলের নেতৃত্বে ভাঙ্গছে বিএনপি, সিনিয়র নেতাদেরও সমর্থন

0
12

গুঞ্জনটা অনেকদিন থেকেই বাতাসে ভাসছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভাঙ্গণের দৃশ্য মনে হয় প্রকাশ্যেই আসছে। এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাবাস করছেন বিএনপির দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।

গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকার পরেও আইনী প্রক্রিয়া বা রাজপথ কোনভাবেই রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। এর মাঝে আবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের ব্রিটিশ নাগরিকত্বের অকাট্য প্রমাণও বিএনপি খণ্ডন করতে পারেনি। সব মিলিয়ে বলা যায় বিএনপি এখন খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে।

ঘুরে দাঁড়াবার যে ন্যূনতম শক্তি সেটাও খুইয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অব্যাহত চাপ রয়েছে বিএনপির উপর সামনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার। চেয়ারপার্সন বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের একগুয়েমির কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এক প্রকার অসম্ভব বলেই মনে করছেন অধিকাংশ বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

কারণ বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তাদের সুনির্দিষ্ট দাবি না মানলে নির্বাচনে যাবেন না বলে বার বার বিএনপির সিনিয়র নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান তাদের বিরুদ্ধে আদালতের রায় হয়ে যাওয়া মামলা প্রত্যাহার না করলে নির্বাচনে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে তৃণমূল নেতা-কর্মী এবং সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের চাপের মুখে রয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। কারণ এবারও নির্বাচন বর্জন করলে রাজনীতির মাঠে বিএনপির অস্তিত্ব থাকবে না বলেই মনে করেন।

দলের এমন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে স্বয়ং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল কারাগারে বেশ কয়েকবার বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তাকে নির্বাচনে আনতে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে ঈদের আগে লন্ডন সফর করেন শেষ ভরসা হিসেবে ফখরুল। তিনি তারেক রহমানকেও বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে চলতি মাসের শুরুতে তার শুভাকাঙ্খী বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতাদের সাথে বৈঠক করেন।

সেখানে ফখরুল দলের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে জানান, আগামী নির্বাচনে বেগম জিয়া এবং তারেক রহমান না আসতে চাইলেও বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখতে যদি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সবাই তাকে সমর্থন করবে কিনা। ফখরুলের ওই প্রস্তাবে দলের অধিকাংশ নেতাই হ্যাঁ সূচক বার্তা দেন।

ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, একাদশ নির্বাচনে যেভাবেই হোক অংশগ্রহণ করবে বিএনপি। যদি তারা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায় তাহলে সরকার গঠন করলে সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন এবং দলের দায়িত্ব থাকবে মির্জা ফখরুলের হাতে। আর যদি বিরোধী দলের চেয়ারে বসা লাগে তবে মির্জা ফখরুল বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে সংসদে থাকবেন এবং দলীয় চেয়ারপার্সন হবেন ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন। আগামী নির্বাচনে নিজ স্ত্রীকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র করাসহ বেশ কিছু শর্তে মির্জা আব্বাসও ফখরুলের নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি হয়।

বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর কিছুদিন বিএনপি কর্মসূচি দিলেও বেশ কয়েক মাস ধরে তারা প্রেস কনফারেন্স ছাড়া আর কিছুই করেনি। কিন্তু হঠাৎ করে কেন ২০ জুলাই বিএনপি রাজধানীতে বড় জমায়েত করার প্রয়োজন মনে করলো এমন প্রশ্নের উত্তর কুজতে গিয়ে জানা যায় যে, জিয়া পরিবারের বাইরে এসে বিএনপি বড় কোন কর্মসূচি ঘোষণা করলে সেখানে নেতা-কর্মীদের সাড়া কেমন পাওয়া যায় তা যাচাই করাই ছিল ফখরুল, মোশারফ-মির্জা আব্বাসদের। ওই আয়োজনে তারা মোটামুটি সফল বলেই ধরে নিয়েছে। আরো দুই এক মাস সব পরিস্থিতি দেখে ফখরুলের নেতৃত্বেই নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিবে। আর এমনটা হলে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রথমবারের মত জিয়া পরিবারের বাইরে থেকে নেতৃত্ব আসতে যাচ্ছে।

comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here