জাতীয় নির্বাচনে আসন বিন্যাস নিয়ে ২০ দলীয় জোটের পুরনো শরিকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে গুরুত্ব হারানোর শঙ্কা। আর শঙ্কা থেকেই নতুন জোট গঠনে বাগড়া দিচ্ছেন তারা। নির্ভরযোগ্য সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে গুলশানে এক হোটেলে বৈঠকে বসেন বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা। সেখানে কথাবার্তার ফাঁকে তাদের তরফহ থেকে নতুন নতুন সব আবদার যোগ হতে থাকে। যেমন কেউ চান ক্ষমতায় গেলে প্রেসিডেন্ট হতে, কেউবা প্রধানমন্ত্রী। কেউ কেউ আবার পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের আবদার করে বসেন। আবার কেউ বা বিশেষ সুবিধা চান ব্যবসা-বাণিজ্যের। আর বিপত্তি সেখানেই। বিষয়টাতে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ডেকে পাঠান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। সম্প্রতি তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে দেশে ফিরেছেন ফখরুল। তারেক রহমান বৃহত্তর জোট প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে জানিয়েছেন ফখরুল।
২০ দলীয় জোটের নেতারা নতুন জোট গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও নতুন জোট হলে প্রত্যাশার চেয়ে কম আসন পাওয়ার দুশ্চিন্তা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে জোটের পুরনো শরিক দলের নেতাদের। কারণ, আসন নিশ্চিত হওয়ার আশায় বেশ কিছু দিন ধরেই তারা স্ব স্ব আসনে নিজেদের মতো করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনে জোটের কাছে ৭০টি আসন চায় জামায়াতে ইসলামী। অন্য দলগুলোর ক্ষেত্রে পাঁচজন করে সব মিলিয়ে দেড় শতাধিক নেতা জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী। কিন্তু যুক্তফ্রন্টের নেতাদের স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় বেশ প্রভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জোটে যেসব দল আছে তারা প্রত্যাশিত আসন পাবে না- এমন ভাবনা বেশ ভোগাচ্ছে সংশ্লিষ্ট নেতাদের।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি বলেন, জোট যেমন আছে তেমনই থাকবে, অনেক গুলো বছর বিএনপির পাশে থেকেছি, এখন নতুন কেউ এসে মধু খাবে তা হতে দেয়া যাবে না। দরকার হলে জোট ভেঙ্গে বেড়িয়ে গিয়ে একক নির্বাচনে লড়বে আমাদের দল। এ বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিকল্পধারা, গণফোরাম, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্য এই দলগুলো আমাদের সাথে যোগ হলে আমাদের লাভ, এতে কেউ নাখোশ হলে জোট ছেড়ে যেতে পারে। এমন বক্তব্যের পর এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহম্মেদ নাখোশ হয়ে লন্ডনে(তারেক রহমানকে) ফোন দিয়ে বসেন, ফোনে কি কথা হয়েছে, কর্নেল অলী কি স্বিদ্ধান্ত নিবেন সে বিষয়ে জানা যায়নি।
সূত্র জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী নতুন জোটের আহ্বায়ক হলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের অবস্থান কী হবে সে প্রশ্নও আছে। পাশাপাশি নির্বাচনে জয়লাভ করলে কার কী অবস্থান হবে এ প্রশ্নও নিষ্পত্তি হতে হবে। কিন্তু বি. চৌধুরীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বিএনপিরই অনেকের মধ্যে প্রশ্ন আছে। আবার বি. চৌধুরী এ ধরনের জোটের প্রধান হলে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপির ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। অলি আহমেদ বেরিয়ে গেলে তার সঙ্গে ২০ দল থেকে আরো দুয়েকটি ছোট দল বেরিয়ে যেতে পারে বলে আলোচনা আছে। শুধু তাই নয়, উদারপন্থি বলে পরিচিত ওই দলগুলোর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত ঐক্য হলে জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে জোট থেকে বেরিয়ে যাবে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।